পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮০
সংকলন

 যখন সবুজ জল ক্রমে নীল হয়ে এল এবং তরঙ্গে তরীতে মিলে গুরুতর আন্দোলন উপস্থিত করে দিলে, তখন দেখলুম, সমুদ্রের পক্ষে জলখেলা বটে কিন্তু আমার পক্ষে নয়।

 ভাবলুম, এই বেলা মানে-মানে কুঠরির মধ্যে ঢুকে কম্বলটা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়িগে। যথাসত্বর ক্যাবিনের মধ্যে প্রবেশ ক’রে কাঁধ হতে কম্বলটি একটি বিছানার উপর ফেলে দরজা বন্ধ করে দিলুম। ঘর অন্ধকার। বুঝলুম, আলো নিবিয়ে দিয়ে দাদা তাঁর বিছানায় শুয়েছেন। শারীরিক দুঃখ নিবেদন করে একটুখানি স্নেহ উদ্রেক করবার অভিপ্রায়ে জিজ্ঞাসা করলুম, “দাদা, ঘুমিয়েছেন কি।” হঠাৎ নিতান্ত বিজাতীয় মোটা গলায় কে-একজন হুহুংকার দিয়ে উঠল, “হুজ, দ্যাট্?” আমি বললুম, “বাস্ রে! এতো দাদা নয়।” তৎক্ষণাৎ বিনীত অনুতপ্তস্বরে জ্ঞাপন করলুম, “ক্ষমা করবেন, দৈবক্রমে ভুল কুঠরিতে প্রবেশ করেছি।” অপরিচিত কণ্ঠ বললে, “অল্ রাইট্।” কম্বলটি পুনশ্চ তুলে নিয়ে কাতর-শরীরে সংকুচিতচিত্তে বেরোতে গিয়ে দেখি দরজা খুঁজে পাই নে। বাক্স তোরঙ্গ লাঠি বিছানা প্রভৃতি বিচিত্র জিনিসের মধ্যে খট্ খট্‌ শব্দে হাতড়ে বেড়াতে লাগলুম! ইঁদুর কলে পড়লে তার মানসিক ভাব কি রকম হয়, এই অবসরে কতকটা বুঝতে পারা যেত, কিন্তু তার সঙ্গে সমুদ্রপীড়ার সংযোগ হওয়াতে ব্যাপারটা অপেক্ষাকৃত জটিল হয়ে পড়েছিল।

 এদিকে লোকটা কী মনে করছে! অন্ধকারে পরের ক্যাবিনে ঢুকে বেরোবার নাম নেই, খট্ খট্‌ শব্দে দশমিনিট কাল জিনিসপত্র হাতডে বেড়ানো— এ কি কোনো সদ্‌বংশীয় সাধুলোকের কাজ! মন যতই ব্যাকুল শরীর ততই গলদ্‌ঘর্ম এবং কণ্ঠাগত অন্তরিন্দ্রিয়ের আক্ষেপ উত্তরোত্তর অবাধ্য হয়ে উঠছে। অনেক অনুসন্ধানের পর যখন হঠাৎ দ্বার উদ্‌ঘাটনের গোলকটি, সেই মসৃণ চিক্কণ শ্বেতকাচ-নির্মিত