পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপযাত্রী
২৮৭

শস্যপরিপূর্ণ প্রকৃতি প্রতিক্ষণে মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছে এবং মানুষকে দ্বিগুণ ভালোবাসছে। মানুষের মতো জীবের এই তো যোগ্য আবাসস্থান। মানুষের প্রেম এবং মানুষের ক্ষমতা যদি আপনার চতুর্দিককে সংহত সুন্দর সমুজ্জ্বল করে না তুলতে পারে তবে তরুকোটর-গুহাগহ্বরবন-বাসী জন্তুর সঙ্গে তার প্রভেদ কী।


১১ সেপ্টেম্বর। লণ্ডনে পৌঁছে সকালবেলায় আমাদের পুরাতন বন্ধুদের সন্ধানে বাহির হওয়া গেল।

 প্রথমে, লণ্ডনের মধ্যে আমার একটি পূর্বপরিচিত বাড়ির দ্বারে গিয়ে আঘাত করা গেল। যে-দাসী এসে দরজা খুলে দিলে তাকে চিনি নে। তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, “আমার বন্ধু বাড়িতে আছেন কি না।” সে বললে, “তিনি এ বাড়িতে থাকেন না।” জিজ্ঞাসা করলুম, “কোথায় থাকেন।” সে বললে, “আমি জানি নে, আপনারা ঘরে এসে বসুন, আমি জিজ্ঞাসা করে আসছি।” পূর্বে যে ঘরে আমরা আহার করতুম সেই ঘরে গিয়ে দেখলুম সমস্ত বদল হয়ে গেছে— সেখানে টেবিলের উপর খবরের কাগজ এবং বই, সে-ঘর এখন অতিথিদের প্রতীক্ষাশালা হয়েছে। খানিকক্ষণ বাদে দাসী একটি কার্ডে-লেখা ঠিকানা এনে দিলে। আমার বন্ধু এখন লণ্ডনের বাইরে কোনো এক অপরিচিত স্থানে থাকেন। নিরাশ হৃদয়ে আমার সেই পরিচিত বাড়ি থেকে বেরলুম।

 মনে কল্পনা উদয় হ’ল, মৃত্যুর বহুকাল পরে আবার যেন পৃথিবীতে ফিরে এসেছি। আমাদের সেই বাড়ির দরজার কাছে এসে দ্বারীকে জিজ্ঞাসা করলুম, সেই অমুক এখানে আছে তো। দ্বারী উত্তর করলে, না, সে অনেক দিন হ’ল চলে গেছে।— চলে গেছে? সেও চলে গেছে! আমি মনে করেছিলুম, কেবল আমিই চলে গিয়েছিলুম, পৃথিবীশুদ্ধ আর সবাই আছে। আমি চলে যাওয়ার পরেও সকলেই