পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
সংকলন

হালকা এবং ভারি, কাঠের এবং টিনের এবং পশুচর্মের এবং কাপড়ের— নিচে একটা, উপরে একটা, পাশে একটা পিছনে একটা—তখন আমার ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকি এবং ছুটোছুটি করবার স্বাভাবিক শক্তি একেবারে চলে যায় এবং তখন আমার শূন্য দৃষ্টি, শুষ্ক মুখ এবং দীনভাব দেখলে নিতান্ত কাপুরুষের মতো বোধ হয়।

 শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ক্রমাগত স—র উচ্ছ্বাস-উক্তি। “ও মা”, “কী চমৎকার”, “কী আশ্চর্য”, “কী সুন্দর”— কেবলই আমাকে ঠেলে আর বলে “দেখো দেখো”। কী করি, যা দেখায় তা দেখতেই হয়— কখনো বা গাছ, কখনো বা মেঘ, কখনো বা একটা দুর্জয় খাঁদা-নাকওয়ালী পাহাড়ী মেয়ে—কখনো বা এমন কত কী যা দেখতে না-দেখতেই গাড়ি চলে যাচ্ছে, এবং স— দুঃখ করছে যে, র— দেখতে পেলে না। গাড়ি চলতে লাগল। ক্রমে ঠাণ্ডা, তার পরে মেঘ, তার পরে সর্দি, তার পরে হাঁচি, তার পরে শাল, কম্বল, বালাপোষ, মোটা মোজা, পা কন্‌কন্, হাত ঠাণ্ডা, মুখ নীল, গলা ভার ভার এবং ঠিক তার পরেই দার্জিলিং। আবার সেই বাক্স, সেই ব্যাগ, সেই বিছানা, সেই পুঁটুলি, মোটের উপর মোট, মুটের উপর মুটে। ব্রেক থেকে জিনিসপত্র দেখে নেওয়া, চিনে নেওয়া, মুটের মাথায় চাপানো, সাহেবকে রসিদ দেখানো, সাহেবের তর্ক বিতর্ক, জিনিস খুঁজে না পাওয়া এবং সেই হারানো জিনিস পুনরুদ্ধারের জন্য বিবিধ বন্দোবস্ত করা, তার পরে বাড়ি যাওয়া।

সূর্যাস্ত

 পতিসর, ১৮৯১। আমার বোট কাছারির কাছ থেকে অনেক দূরে এনে একটি নিরিবিলি জায়গায় বেঁধেছি। আমি এখন যেখানে এসেছি এ জায়গায় অধিকন্তু মানুষের মুখ দেখা যায় না। চারিদিকে কেবল মাঠ ধূ ধূ করছে, মাঠের শস্য কেটে নিয়ে গেছে, কেবল কাটা