পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নপত্র
৩০৫

খেপে তখন খুব খেপে, যখন ঠাণ্ডা হয় তখন অগাধ শান্তি। বড়োত্বর সঙ্গে সঙ্গে যে একরকম শ্রীহীনত্ব আছে তাতে অন্তরকে বিমুখ করে না, বরঞ্চ আকর্ষণ করে আনে। আমার ঘরে যে বেঠোভেনের ছবি আছে অনেক সুন্দর মুখের সঙ্গে তুলনা করলে তাকে দর্শনযোগ্য মনে না হতে পারে, কিন্তু আমি যখন তার দিকে চাই, সে আমাকে খুব টেনে নিয়ে যায়— ঐ উস্কোখুস্কো মাথাটার ভিতরে কতো বড়ো একটা শব্দহীন শব্দজগৎ। এবং কী একটা বেদনাময় অশান্ত ক্লিষ্ট প্রতিভা রুদ্ধঝড়ের মতো ঐ লোকটার ভিতর ঘূর্ণমান হত।

শুকতারা

 পতিসর, ২৫ মার্চ ১৮৯৪। আজকাল ভোরের বেলায় চোখ মেলেই ঠিক আমার খোলা জানলার সামনেই শুকতারা দেখতে পাই—তাকে আমার ভারি মিষ্টি লাগে, সেও আমার দিকে চেয়ে থাকে, যেন বহুকালের আমার আপনার লোক। মনে আছে, যখন শিলাইদহে কাছারি করে সন্ধ্যাবেলায় নৌকো করে নদী পার হতুম, এবং রোজ আকাশে সন্ধ্যাতারা দেখতে পেতুম, আমার ভারি একটা সান্ত্বনা বোধ হত। ঠিক মনে হত, আমার নদীটি যেন আমার ঘরসংসার এবং আমার সন্ধ্যাতারাটি আমার এই ঘরের গৃহলক্ষ্মী— আমি কখন কাছারি থেকে ফিরে আসব এইজন্য সে উজ্জ্বল হয়ে সেজে বসে আছে। তার কাছ থেকে এমন একটি স্নেহস্পর্শ পেতুম। তখন নদীটি নিস্তব্ধ হয়ে থাকত, বাতাসটি ঠাণ্ডা, কোথাও কিছু শব্দ নেই, ভারি যেন একটা ঘনিষ্ঠতার ভাবে আমার সেই প্রশান্ত সংসারটি পরিপূর্ণ হয়ে থাকত। আমার সেই শিলাইদহে প্রতি সন্ধ্যায় নিস্তব্ধ অন্ধকারে নদী পার হওয়াটা খুব স্পষ্টরূপে প্রায়ই মনে পড়ে। ভোরের বেলায় প্রথম দৃষ্টিপাতেই শুকতারাটি দেখে, তাকে আমার একটি বহুপরিচিত