পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নপত্র
৩০৭

ক্ষুদ্র ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করতে শিখেছে। আমি সে চিত্র বেশ দেখতে পাচ্ছি। তার সেই নরম নরম মুঠোর আঁচড়ের জন্যে আমার মুখটা নাকটা তৃষার্ত হয়ে আছে। সে যেখানে সেখানে আমাকে মুঠো করে ধরে টল্‌মলে মাথাটা নিয়ে হাম্ করে খেতে আসত এবং খুদে খুদে আঙুলগুলোর মধ্যে আমার চশমার হারটা জড়িয়ে নিতান্ত নির্বোধ নিশ্চিন্ত গম্ভীরভাবে গাল ফুলিয়ে চেয়ে থাকত, সেই কথাটা মনে পড়ছে।

ইচ্ছামতী

 পাবনা-পথে, ৯ জুলাই ১৮৯৫। আঁকাবাকা ইচ্ছামতী নদীর ভিতর দিয়ে চলেছি। এই ছোটো খামখেয়ালি বর্ষাকালের নদীটি, এই যে দুই ধারে সবুজ ঢালু ঘাট, দীর্ঘ ঘন কাশবন, পাটের খেত, আখের খেত, আর সারিসারি গ্রাম— এ যেন একই কবিতার কয়েকটা লাইন, আমি বার বার আবৃত্তি করে যাচ্ছি এবং বারবারই ভালো লাগছে। পদ্মার মতো বড়ো নদী এতই বড়ো যে, সে যেন ঠিক মুখস্থ করে নেওয়া যায় না, আর, এই কেবল কটি বর্ষামাসের দ্বারা অক্ষরগোনা ছোটো বাঁকা নদীটি যেন বিশেষ করে আমার হয়ে যাচ্ছে।

 পদ্মানদীর কাছে মানুষের লোকালয় তুচ্ছ কিন্তু ইচ্ছামতী মানুষঘেঁষা নদী; তার শান্ত জলপ্রবাহের সঙ্গে মানুষের কর্মপ্রবাহের স্রোত মিশে যাচ্ছে। সে ছেলেদের মাছ ধরবার এবং মেয়েদের স্নান করবার নদী। স্নানের সময় মেয়েরা যে-সমস্ত গল্পগুজব নিয়ে আসে সেগুলি এই নদীটির হাস্যময় কলধ্বনির সঙ্গে এক সুরে মিলে যায়। আশ্বিন মাসে মেনকার ঘরের পার্বতী যেমন কৈলাসশিখর ছেড়ে একবার তাঁর বাপের বাড়ি দেখেশুনে যান, ইচ্ছামতী তেমনি সম্বৎসর অদর্শন থেকে বর্ষার কয়েকমাস আনন্দহাস্য করতে করতে তার আত্মীয়