পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৮
সংকলন

লোকালয়গুলির তত্ত্ব নিতে আসে। তার পরে ঘাটে ঘাটে মেয়েদের কাছে প্রত্যেক গ্রামের সমস্ত নূতন খবর শুনে নিয়ে তাদের সঙ্গে মাখামাখি সখিত্ব করে আবার চলে যায়।

 সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আকাশ মেঘে অন্ধকার; গুরুগুরু মেঘ ডাকছে, এবং ঝোড়ো হাওয়ায় তীরের বনঝাউগুলো দুলে উঠছে। বাঁশঝাড়ের মধ্যে ঘন কালির মতো অন্ধকার এবং জলের উপর গোধূলির একটা বিবর্ণ ধূসর আলো প’ড়ে একটা অস্বাভাবিক উত্তেজনার মতো দেখতে হয়েছে।

সন্ধ্যা

 নাগরনদীর ঘাট, ১৬ ডিসেম্বর ১৮৯৫। কাল অনেকদিন পরে সূর্যাস্তের পর ওপারের পাড়ের উপর বেড়াতে গিয়েছিলুম। সেখানে উঠেই হঠাৎ যেন এই প্রথম দেখলুম, আকাশের আদি-অন্ত নেই— জনহীন মাঠ দিগ্‌দিগন্ত ব্যাপ্ত ক’রে হা হা করছে— কোথায় দুটি ক্ষুদ্র গ্রাম, কোথায় এক প্রান্তে সংকীর্ণ একটু জলের রেখা। কেবল নীল আকাশ এবং ধূসর পৃথিবী, আর তারই মাঝখানে একটি সঙ্গীহীন গৃহহীন অসীম সন্ধ্যা, মনে হয়, যেন একটি সোনার চেলি-পরা বধূ অনন্ত প্রান্তরের মধ্যে মাথায় একটুখানি ঘোমটা টেনে একলা চলেছে; ধীরে ধীরে কত শত সহস্র গ্রাম নদী প্রান্তর পর্বত নগর বনের উপর দিয়ে যুগযুগান্তরকাল সমস্ত পৃথিবীমণ্ডলকে একাকিনী ম্লাননেত্রে, মৌনমুখে, শ্রান্তপদে প্রদক্ষিণ করে আসছে। তার বর যদি কোথাও নেই তবে তাকে এমন সোনার বিবাহবেশে কে সাজিয়ে দিলে। কোন্ অন্তহীন পশ্চিমের দিকে তার পতিগৃহ।