পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৬
সংকলন

সারিয়া সন্ধ্যার সময় আমাদের পড়াশুনা গানবাজনায় তিনি সম্পূর্ণ যোগ দিতেন; অবকাশের কালে আমোদ-প্রমোদকে জমাইয়া তোলা, সেটাও গৃহিণীর কর্তব্যেরই অঙ্গ।

 কয়েক মাস এখানে কাটিয়া গেল। মেজদাদাদের দেশে ফিরিবার সময় উপস্থিত হইল। পিতা লিখিয়া পাঠাইলেন আমাকেও তাঁহাদের সঙ্গে ফিরিতে হইবে। সে-প্রস্তাবে আমি খুশি হইয়া উঠিলাম। দেশের আলোক, দেশের আকাশ আমাকে ভিতরে ভিতরে ডাক দিতেছিল। বিদায়গ্রহণকালে মিসেস স্কট আমার দুই হাত ধরিয়া কাঁদিয়া কহিলেন, “এমন করিয়াই যদি চলিয়া যাইবে তবে এত অল্পদিনের জন্য তুমি কেন এখানে আসিলে।” লণ্ডনে এই গৃহটি এখন আর নাই; এই ডাক্তারপরিবারের কেহ-বা পরলোকে, কেহ-বা ইহলোকে কে কোথায় চলিয়া গিয়াছেন তাহার কোনো সংবাদই জানি না, কিন্তু সেই গৃহটি আমার মনের মধ্যে চিরপ্রতিষ্ঠিত হইয়া আছে।

সন্ধ্যাসংগীত

 একসময়ে জ্যোতিদাদারা দূর দেশে ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলেন, তেতলার ছাদের ঘরগুলি শূন্য ছিল। সেই সময় আমি সেই ছাদ ও ঘর অধিকার করিয়া নির্জন দিনগুলি যাপন করিতাম।

 এইরূপে যখন আপন মনে একা ছিলাম তখন, জানি না কেমন করিয়া কাব্যরচনার যে-সংস্কারের মধ্যে বেষ্টিত ছিলাম সেটা খসিয়া গেল। দুটো-একটা কবিতা লিখিতেই মনের মধ্যে ভারি একটা আনন্দের আবেগ আসিল। আমার সমস্ত অন্তঃকরণ বলিয়া উঠিল—‘বাঁচিয়া গেলাম।’ যাহা লিখিতেছি, এ দেখিতেছি, সম্পূর্ণ আমারই। এই স্বাধীনতার প্রথম আনন্দের বেগে ছন্দোবন্ধকে আমি একেবারেই খাতির করা ছাড়িয়া দিলাম। নদী যেমন একটা খালের মতো সিধা