পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৮
সংকলন

‘তোমায় বিদেশিনী সাজিয়ে কে দিলে।’ সেই গানের ঐ একটিমাত্র পদ মনে এমন একটি অপরূপ চিত্র আঁকিয়া দিয়াছিল যে আজো ঐ লাইনটা মনের মধ্যে গুঞ্জন করিয়া বেড়ায়। একদিন ঐ গানের ঐ পদটার মোহে আমিও একটি গান লিখিতে বসিয়াছিলাম। স্বরগুঞ্জনের সঙ্গে প্রথম লাইনটা লিখিয়াছিলাম—‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’— সঙ্গে যদি সুরটুকু না থাকিত তবে এ গানের কী ভাব দাঁড়াইত বলিতে পারি না। কিন্তু ঐ সুরের মন্ত্রগুণে বিদেশিনীর এক অপরূপ মূর্তি মনে জাগিয়া উঠিল। আমার মন বলিতে লাগিল, ‘আমাদের এই জগতের মধ্যে একটি কোন্ বিদেশিনী আনাগোনা করে; কোন্ রহস্যসিন্ধুর পরপারে ঘাটের উপরে তাহার বাড়ি; তাহাকেই শারদপ্রাতে, মাধবী রাত্রিতে, ক্ষণে ক্ষণে দেখিতে পাই; হৃদয়ের মাঝখানেও মাঝে মাঝে তাহার আভাস পাওয়া গেছে; আকাশে কান পাতিয়া তাহার কণ্ঠস্বর কখনো-বা শুনিয়াছি।’ সেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিশ্ববিমোহিনী বিদেশিনীর দ্বারে আমার গানের সুর আমাকে আনিয়া উপস্থিত করিল এবং আমি কহিলাম:

ভুবন ভ্রমিয়া শেষে
এসেছি তোমারি দেশে,
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে, ওগো বিদেশিনী।

ইহার অনেকদিন পরে একদিন বোলপুরের রাস্তা দিয়া কে গাহিয়া যাইতেছিল—

খাঁচার মাঝে অচিন পাখি কম্‌নে আসে যায়,
ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতেম পাখির পায়।

দেখিলাম, বাউলের গানও ঠিক ঐ একই কথা বলিতেছে। মাঝেমাঝে বন্ধ খাঁচার মধ্যে আসিয়া অচিন পাখি বন্ধনহীন অচেনার কথা বলিয়া যায়, মন তাহাকে চিরন্তন করিয়া ধরিয়া রাখিতে চায় কিন্তু