পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনস্মৃতি
৩৪৫

হয় আমার কাব্যরচনার এই একটিমাত্র পালা। সে পালার নাম দেওয়া যাইতে পারে, সীমার মধ্যেই অসীমের সহিত মিলন-সাধনের পালা। এই ভাবটাকেই আমার শেষ বয়সের একটি কবিতার ছত্রে প্রকাশ করিয়াছিলাম: বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয়।

 কারোয়ার হইতে ফিরিবার সময় জাহাজে প্রকৃতির প্রতিশোধ-এর কয়েকটি গান লিখিয়াছিলাম। বড়ো একটি আনন্দের সঙ্গে প্রথম গানটি জাহাজের ডেকে বসিয়া সুর দিয়া গাহিতে গাহিতে রচনা করিয়াছিলাম:

হ্যাদে গো নন্দরানী,
আমাদের শ্যামকে ছেড়ে দাও—
আমরা রাখাল বালক গোষ্ঠে যাব,
আমাদের শ্যামকে দিয়ে যাও।

 সকালের সূর্য উঠিয়াছে, ফুল ফুটিয়াছে, রাখাল বালকেরা মাঠে যাইতেছে— সেই সূর্যোদয়, সেই ফুল ফোটা, সেই মাঠের বিহার তাহারা শূন্য রাখিতে চায় না; সেইখানেই তাহারা তাহাদের শ্যামের সঙ্গে মিলিত হইতে চাহিতেছে, সেইখানেই অসীমের সাজপরা রূপটি তাহারা দেখিতে চায়; সেইখানেই মাঠে ঘাটে বনে পর্বতে অসীমের সঙ্গে আনন্দের খেলায় যোগ দিবে বলিয়াই তাহারা বাহির হইয়া পড়িয়াছে—দূরে নয়, ঐশ্বর্যের মধ্যে নয়; তাহাদের উপকরণ অতি সামান্য, পীতধড়া ও বনফুলের মালাই তাহাদের সাজের পক্ষে যথেষ্ট।

ছবি ও গান

 কারোয়ার হইতে ফিরিবার সময় আমার বয়স ২২ বৎসর। ‘ছবি ও গান’ নাম ধরিয়া আমার যে কবিতাগুলি বাহির হইয়াছিল