পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনস্মৃতি
৩৪৭

নৌকা— কোনো প্রয়োজন নাই, কেবলই ভাসিয়া বেড়াইতেছে। উহারই মধ্যে দুই-একজন লক্ষ্মীছাড়া বিনা পরিশ্রমে আমার দ্বারা অভাবপূরণ করিয়া লইবার জন্য নানা ছল করিয়া আমার কাছে আসিত। কিন্তু আমাকে ফাঁকি দিতে কোনো কৌশলেরই প্রয়োজন ছিল না; তখন আমার সংসারভার লঘু ছিল এবং বঞ্চনাকে বঞ্চনা বলিয়াই চিনিতাম না। আমি অনেক ছাত্রকে দীর্ঘকাল পড়িবার বেতন দিয়াছি যাহাদের পক্ষে বেতন নিষ্প্রয়োজন এবং পড়াটার প্রথম হইতে শেষ পর্যন্তই অনধ্যায়। একবার এক লম্বা চুলওয়ালা ছেলে তাহার কাল্পনিক ভগিনীর এক চিঠি আনিয়া আমার কাছে দিল। তাহাতে তিনি তাঁহারই মতো কাল্পনিক এক বিমাতার অত্যাচারে পীড়িত এই সহোদটিকে আমার হস্তে সমর্পণ করিতেছেন। ইহার মধ্য কেবল এই সহোদরটিই কাল্পনিক নহে, তাহার নিশ্চয় প্রমাণ পাইলাম। কিন্তু যে-পাখি উড়িতে শেখে নাই তাহার প্রতি অত্যন্ত তাগ-বাগ করিয়া বন্দুক লক্ষ্য করা যেমন অনাবশ্যক, ভগিনীর চিঠও আমার পক্ষে তেমনি বাহুল্য ছিল। একবার একটি ছেলে আসিয়া খবর দিল, সে বি-এ পডিতেছে, কিন্তু মাথার ব্যামোতে পরীক্ষা দেওয়া তাহার পক্ষে অসাধ্য হইয়াছে। শুনিয়া আমি উদ্‌বিগ্ন হইলাম, কিন্তু অন্যান্য অধিকাংশ বিদ্যারই ন্যায় ডাক্তারি বিদ্যাতেও আমার পারদর্শিতা ছিল না, সুতরাং কী উপায়ে তাহাকে আশ্বস্ত করিব ভাবিয়া পাইলাম না। সে বলিল, “স্বপ্নে দেখিয়াছি, পূর্বজন্মে আপনার স্ত্রী আমার মাতা ছিলেন, তাঁহার পাদোদক খাইলেই আমার আরোগ্যলাভ হইবে।” বলিয়া একটু হাসিয়া কহিল, “আপনি বোধ হয় এ সমস্ত বিশ্বাস করেন না।” আমি বলিলাম, “আমি বিশ্বাস নাই করিলাম, তোমার রোগ যদি সারে তো সারুক।” স্ত্রীর পাদোদক বলিয়া একটা জল চালাইয়া দিলাম। খাইয়া সে আশ্চর্য উপকার বোধ করিল। ক্রমে অভিব্যক্তির পর্যায়ে