পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭০
সংকলন

ঘেঁষাঘেঁষি ক’রে রাখা তাদের অপমান করা- সে যেন সতী স্ত্রীকে সতিনের ঘর করতে দেওয়ার মতো। ক্রমে ক্রমে অপেক্ষা ক’রে ক’রে স্তব্ধতা ও নিঃশব্দতার দ্বারা মনের ক্ষুধাকে জাগ্রত ক’রে তুলে, তার পরে এইরকম দুটি-একটি ভালো জিনিস দেখালে, সে যে কী উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এখানে এসে তা স্পষ্ট বুঝতে পারলুম।

 তার পরে গৃহস্বামী এসে বললেন— চা তৈরি করা এবং পরিবেষণের ভার তিনি তাঁর মেয়ের উপরে দিয়েছেন। তাঁর মেয়ে এসে, নমস্কার ক’রে চা-তৈরিতে প্রবৃত্ত হলেন। তাঁর প্রবেশ থেকে আরম্ভ ক’রে, চা-তৈরির প্রত্যেক অঙ্গ যেন ছন্দের মতো। ধোয়া মোছা আগুন-জ্বালা, চা-দানির ঢাকা খোলা, গরম জলের পাত্র নামানো, পেয়ালায় চা ঢালা, অতিথির সম্মুখে এগিয়ে দেওয়া, সমস্ত এমন সংযম এবং সৌন্দর্যে মণ্ডিত যে, সে না দেখলে বোঝা যায় না। এই চা-পানের প্রত্যেক আসবাবটি দুর্লভ ও সুন্দর। অতিথির কর্তব্য হচ্ছে, এই পাত্রগুলিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একান্ত মনোযোগ দিয়ে দেখা। প্রত্যেক পাত্রের স্বতন্ত্র নাম এবং ইতিহাস। কত-যে তার যত্ন, সে বলা যায় না।

 সমস্ত ব্যাপারটা এই। শরীরকে মনকে একান্ত সংযত ক’রে, নিরাসক্ত প্রশান্ত মনে সৌন্দর্যকে নিজের প্রকৃতির মধ্যে গ্রহণ করা। ভোগীর ভোগোম্মাদ নয়— কোথাও লেশমাত্র উচ্ছৃঙ্খলতা বা অমিতাচার নেই; মনের উপরতলায় সর্বদা যেখানে নানা স্বার্থের আঘাতে, নানা প্রয়োজনের হাওয়ায়, কেবলই ঢেউ উঠছে, তার থেকে দূরে, সৌন্দর্যের গভীরতার মধ্যে নিজেকে সমাহিত ক’রে দেওয়াই হচ্ছে এই চা-পান অনুষ্ঠানের তাৎপর্য।

 এর থেকে বোঝা যায়, জাপানের যে-সৌন্দর্যবোধ সে তার একটা সাধনা, একটা প্রবল শক্তি। বিলাস জিনিসটা অন্তরে বাহিরে কেবল