পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নববর্ষ

শান্তিনিকেতন আশ্রমে পঠিত

 অধুনা আমাদের কাছে কর্মের গৌরব অত্যন্ত বেশি। হাতের কাছে হউক দূরে হউক দিনে হউক, দিনের অবসানে হউক কর্ম করিতে হইবে। কী করি, কী করি, কোথায় মরিতে হইবে, কোথায় আত্মবিসর্জন করিতে হইবে, ইহাই অশান্তচিত্তে আমরা খুঁজিতেছি। য়ুরোপে লাগাম পরা অবস্থায় মরা একটা গৌরবের কথা। কাজ, অকাজ, অকারণ কাজ, যে-উপায়েই হউক, জীবনের শেষ নিমেষপাত পর্যন্ত ছুটাছুটি করিয়া মাতামাতি করিয়া মরিতে হইবে। এই কর্ম-নাগরদোলার ঘুর্ণিনেশা যখন এক-একটা জাতিকে পাইয়া বসে তখন পৃথিবীতে আর শান্তি থাকে না। তখন দুর্গম হিমালয়শিখরে যে লোমশ ছাগ এতকাল নিরুদ্‌বেগে জীবন বহন করিয়া আসিতেছে, তাহারা অকস্মাৎ শিকারির গুলিতে প্রাণত্যাগ করিতে থাকে। বিশ্বস্তচিত্ত সীল এবং পেঙ্গুয়িন পক্ষী এতকাল জনশূন্য তুষারমেরুর মধ্যে নির্বিরোধে প্রাণধারণ করিবার সুখটুকু ভোগ করিয়া আসিতেছিল,—অকলঙ্ক শুভ্র নীহার হঠাৎ সেই নিরীহ প্রাণীদের রক্তে রঞ্জিত হইয়া উঠে। কোথা হইতে বণিকের কামান শিল্পনিপুণ প্রাচীন চীনের কণ্ঠের মধ্যে অহিফেনের পিণ্ড বর্ষণ করিতে থাকে, এবং আফ্রিকার নিভৃত অরণ্যসমাচ্ছন্ন কৃষ্ণত্ব সভ্যতার বজ্রে বিদীর্ণ হইয়া আর্তস্বরে প্রাণত্যাগ করে।