পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
সংকলন

স্বদেশবলি-স্বরূপে উৎসর্গ করিতে পারিবেন না? স্বদেশের সহিত আমাদের মঙ্গলসম্বন্ধ—সে কি আমাদের ব্যক্তিগত হইবে না। আমরা কি স্বদেশকে জলদান বিদ্যাদান প্রভৃতি মঙ্গলকর্মগুলিকে পরের হাতে সমর্পণ করিয়া দেশ হইতে আমাদের চেষ্টা, চিন্তা ও হৃদয়কে একেবারে বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিব। গবর্মেণ্ট আজ বাংলাদেশের জলকষ্ট নিবারণের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতেছেন—মনে করুন, আমাদের আন্দোলনের প্রচণ্ড তাগিদে পঞ্চাশ-লক্ষ টাকা দিলেন এবং দেশে জলের কষ্ট একেবারেই রহিল না— তাহার ফল কী হইল। তাহার ফল এই হইল যে, সহায়তালাভ কল্যাণলাভের সূত্রে দেশের যে-হৃদয় এতদিন সমাজের মধ্যেই কাজ করিয়াছে ও তৃপ্তি পাইয়াছে, তাহাকে বিদেশীর হাতে সমর্পণ করা হইল। যেখান হইতে দেশ সমস্ত উপকার পাইবে সেইখানেই সে তাহার সমস্ত হৃদয স্বভাবতই দিবে। দেশের টাকা নানা পথ দিয়া নানা আকারে বিদেশের দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে বলিয়া আমরা আক্ষেপ করি—কিন্তু দেশের হৃদয় যদি যায়, দেশের সহিত যত-কিছু কল্যাণসম্বন্ধ একে একে সমস্তই যদি বিদেশী গবর্নেণ্টেরই করায়ত্ত হয়, আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে, তবে সেটা কি বিদেশগামী টাকার স্রোতের চেয়ে অল্প আক্ষেপের বিষয় হইবে। এইজন্যই কি আমরা সভা করি, দরখাস্ত করি, ও এইরূপে দেশকে অন্তরে-বাহিরে সম্পূর্ণভাবে পরের হাতে তুলিয়া দিবার চেষ্টাকেই কি বলে দেশহিতৈষিতা। ইহা কদাচই হইতে পারে না। ইহা কখনই চিরদিন এদেশে প্রশ্রয় পাইবে না— কারণ, ইহা ভারতবর্ষের ধর্ম নহে। বিদেশী চিরদিন আমাদের স্বদেশকে অন্নজল ও বিদ্যা ভিক্ষা দিবে, আমাদের কর্তব্য কেবল এই যে, ভিক্ষার অংশ মনের মতো না হইলেই আমরা চীৎকার করিতে থাকিব? কদাচ নহে— কদাচ নহে। স্বদেশের ভার আমরা প্রত্যেকেই এবং