পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বদেশী সমাজ
৭৫

প্রতিদিনই গ্রহণ করিব— তাহাতে আমাদের গৌরব, আমাদের ধর্ম। এইবার সময় আসিয়াছে যখন আমাদের সমাজ একটি সুবৃহৎ স্বদেশসমাজ হইয়া উঠিবে। সময় আসিয়াছে যখন প্রত্যেকে জানিব আমি একক নহি,— আমি ক্ষুদ্র হইলেও আমাকে কেহ ত্যাগ করিতে পারিবে না, এবং ক্ষুদ্রতমকেও আমি ত্যাগ করিতে পারিব না।

 * * *

 পূর্বেই বলিয়াছি, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি প্রত্যহ অতি অল্পপরিমাণেও কিছু স্বদেশের জন্য উৎসর্গ করিবে। তা ছাড়া, প্রত্যেক গৃহে বিবাহাদি শুভকর্মে গ্রামভাটি প্রভৃতির ন্যায় এই স্বদেশী-সমাজের একটি প্রাপ্য আদায় দুরূহ বলিয়া মনে করি না। ইহা যথাস্থানে সংগৃহীত হইলে অর্থাভাব ঘটিবে না। আমাদের দেশে স্বেচ্ছাদত্ত দানে বড়ো বড়ো মঠ মন্দির চলিতেছে, এদেশে কি সমাজ ইচ্ছাপূর্বক আপনার আশ্রয়স্থান আপনি রচনা করিবে না। বিশেষত যখন অন্নে-জলে স্বাস্থ্যে-বিদ্যায় দেশ সৌভাগ্যলাভ করিবে তখন কৃতজ্ঞতা কখনোই নিশ্চেষ্ট থাকিবে না।

 আত্মশক্তি একটি বিশেষ স্থানে সর্বদা সঞ্চয় করা, সেই বিশেষ স্থানে উপলব্ধি করা, সেই বিশেষ স্থান হইতে প্রয়োগ করিবার একটি ব্যবস্থা থাকা, আমাদের পক্ষে কিরূপ প্রয়োজনীয় হইয়াছে, একটু আলোচনা করিলেই তাহা স্পষ্ট বুঝা যাইবে।

 আমাদের দেশে মধ্যে মধ্যে সামান্য উপলক্ষ্যে হিন্দু-মুসলমানে বিরোধ বাধিয়া উঠে, সেই বিরোধ মিটাইয়া দিয়া উভয় পক্ষের মধ্যে প্রীতি ও শান্তি স্থাপন, উভয় পক্ষের স্ব-স্ব অধিকার নিয়মিত করিয়া দিবার বিশেষ কর্তৃত্ব সমাজের কোনো স্থানে যদি না থাকে, তবে সমাজ বারে বারে ক্ষতবিক্ষত হইয়া উত্তরোত্তর দুর্বল হইয়া পড়িবেই।