পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা প্রথম খণ্ড.djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ sጫግ কেবল তিন কন্যা সস্তান হইয়াছিল । বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ী আর ঐ তিনটি কন্যা প্রতিপালনের কোন উপায় রাখিয়া স্বামী মরেন নাই তিনি নানা ব্যবসায়ে কালযাপন করিতেন আমার গায়ে যে অলঙ্কার ছিল তাহা বিক্রয় করিয়া তাহার শ্রাদ্ধ করিয়াছিলাম শেষে অন্নাভাবে কএক প্রাণী মারা পড়িবার প্রকরণ উপস্থিত হইল তখন বিধাতা আমাকে এমত বুদ্ধি দিলেন যে যাহাতে আমারদিগের প্রাণ রক্ষণ হইতে পারে অর্থাৎ আসন ও চরকায় স্থত কাটিতে আরম্ভ করিলাম প্রাতঃকালে গৃহকৰ্ম্ম অর্থাৎ পাটি ঝাটি করিয়া চরকা লইয়া বসিতাম বেলা দুই প্রহরপর্য্যস্ত কাটন কাটিতম প্রায় এক তোলা স্থত কাটিয়া স্বানে যাইতাম স্বান করিয়া রন্ধন করিয়া শ্বশুর শাশুড়ী আর তিন কন্যাকে ভোজন করাইয়া পরে আমি কিছু খাইয়া সরু টেকো লইয়া আসন স্থত কাটিতাম তাহাও প্রায় এক তোলা আন্দাজ কাটিয়া উঠিতম এই প্রকারে স্থত কাটিয়া তাতির বাটীতে আসিয়া টাকায় তিন তোলার দরে চরকার স্থত আর দেড় তোলার দরে সরু আসন স্থতা লইয়া যাইত এবং যত টাকা আগামি চাহিতাম তৎক্ষণাৎ দিত ইহাতে আমারদিগের অন্ন বস্ত্রের কোন উদ্বেগ ছিল না পরে ক্রমে২ ঐ কৰ্ম্মে বড়ই নিপুণ হইলাম কএক বৎসরের মধ্যে আমার হাতে সাত গগু টাকা হইল এক কন্যার বিবাহ দিলাম ঐ প্রকারে তিন কন্যার বিবাহ দিলাম তাহাতে কুটুম্বতার যে ধারা আছে তাহার কিছু অন্যথা হইল না রাড়ের মেয়া বলিয়া কেহ ঘৃণা করিতে পারে নাই কেননা ঘটক কুলীনকে যাহা দিতে হয় সকলি করিয়াছি তৎপরে শ্বশুরের কাল হইল তাহার শ্রাদ্ধে এগার গণ্ডী টাকা খরচ করি তাহ{ তাতিরা আমাকে কৰ্জ দিয়াছিল দেড় বৎসরের মধ্যে তাহা শোধ দিলাম কেবল চরকার প্রসাদাৎ এতপৰ্য্যস্ত হইয়াছিল এক্ষণে তিন বৎসরাবধি দুই শ্বাশুড়ী বধূর অন্নাভাব হইয়াছে স্থতা কিনিতে তাতি বাটতে আসা দূরে থাকুক হাটে পাঠাইলে পূৰ্ব্বাপেক্ষ সিকি দরেও লয় না ইহার কারণ কি কিছুই বুঝিতে পারি না অনেক লোককে জিজ্ঞাসা করিয়াছি অনেকে কহে যে বিলাতি স্থত বিস্তর আমদানি হইতেছে সেই সকল স্থত তাতিরা কিনিয়া কাপড় বুনে। আমার মনে অহঙ্কার ছিল যে আমার যেমন স্থত এমন কখন বিলাতি স্থত হইবেক না পরে বিলাতি স্থত আনাইয়া দেখিলাম আমার স্থতাহইতে ভাল বটে তাহার দর শুনিলাম ৩,৪ টাকা করিয়া সের আমি কপালে ঘা মারিয়া কহিলাম হা বিধাতা আমাহইতেও দুঃখিনী আর আছে পূৰ্ব্বে জানিতাম বিলাতে তাবৎ লোক বড় মানুষ বাঙ্গালি সব কাঙ্গালী এক্ষণে বুঝিলাম আমাহইতেও সেখানে কাঙ্গালিনী আছে কেননা তাহারা যে দুঃখ করিয়া এই স্থতা প্রস্তুত করিয়াছে সে দুঃখ আমি বিলক্ষণ জানিতে পারিয়াছি এমত দুঃখের সামগ্রী সেখানকার হাটে বাজারে বিক্রয় হইল না একারণ এ দেশে পাঠাইয়াছেন এখানেও যদি উত্তম দরে বিক্রয় হইত তবে ক্ষতি ছিল না তাহা না হইয়া কেবল আমারদিগের সর্বনাশ হইয়াছে সে স্থতায় যত বস্ত্রাদি হয় তাহ লোক দুই মাসও ভালরূপে ব্যবহার করিতে পারে না গলিয়া যায় অতএব সেখানকার কাটনিরদিগকে মিনতি করিয়া বলিতেছি যে আমার এই দরখাস্ত বিবেচনা করিলে এদেশে স্থতা পাঠান উচিত