২২ ভূমিকা তেমনই হিন্দুদের জন্য সংস্কৃত শিক্ষার ও মুসলমানদের জন্য আরবী-ফারসী শিক্ষার ব্যবস্থা উহার আর একটি দিক। এই দুইটি দিকেই সরকারের স্বার্থ সমান ছিল। এক দিকে র্তাহাদের ইংরেজী-শিক্ষিত কৰ্ম্মচারীর ও কেরাণীর আবশুক ছিল, আর এক দিকে হিন্দু ও মুসলমান উত্তরাধিকার ও অন্যান্ত আইন ব্যাখ্যা করিবার জন্য র্তাহাদের পণ্ডিত ও মৌলবীর প্রয়োজন ছিল । সেজন্য সরকার হইতে ইংরেজী শিক্ষার যেমন আমুকুল্য করা হইত, তেমনই আবার সংস্কৃত ও ফারসী শিক্ষারও ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। প্রধানতঃ এই উদ্দেশুেই কলিকাতায় সংস্কৃত কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। এই দুইটি প্রতিষ্ঠানেরই বিবরণ ‘সমাচার দর্পণে প্রকাশিত হইয়াছিল ও এই সঙ্কলনে উদ্ধৃত হইয়াছে। সংস্কৃত শিক্ষার জন্য সংস্কৃত কলেজ ছাড়া প্রাচীন ধরণের বহু চতুষ্পাঠীও এদেশে ছিল। এই সকল চতুষ্পাঠীর বিবরণও এই সঙ্কলনে উদ্ধৃত করিয়াছি। এই বিবরণগুলির ও সেকালের পণ্ডিতদের কথা ( পৃ. ৪২-৫৪ ) একসঙ্গে পড়িলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এদেশে সংস্কৃত চর্চ কিরূপ হইত তাহার কতকটা আভাস পাওয়া যাইবে । শিক্ষা-বিষয়ক যে-সকল সংবাদ এই সঙ্কলনে উদ্ধৃত হইল তাহা হইতে আর একটি বিষয়ও পরিষ্কার বুঝা যায়। তাহ। এই,—এদেশে শিক্ষাবিস্তারের জন্য গোড়ার দিকে ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী বা সরকার বিশেষ চেষ্টা বা অর্থব্যয় করেন নাই । জনসাধারণের শিক্ষার উন্নতির জন্য চেষ্টা করিয়াছিলেন প্রধানতঃ এদেশীয় কয়েক জন গণ্যমান্য লোক, বে-সরকারী সাহেব ও বিদেশী মিশনরী। হিন্দুকলেজের প্রতিষ্ঠা প্রথমতঃ এদেশের লোকদের দ্বারাই হইয়াছিল । স্ত্রীশিক্ষার জন্যও এই দেশের এক জন ভূস্বামীই—রাজা বৈদ্যনাথ রায়—বিশ হাজার টাকা দান করেন ( পৃ. ১৭ )। শিক্ষাবিস্তারে অন্যান্যের দানের কথা ৩৮-৩৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যাইবে । সরকার এই সকল ব্যাপারে উৎসাহদান ভিন্ন বিশেষ সাহায্য করেন নাই । ১৮৩০ সনের এপ্রিল পর্য্যস্ত ‘সমাচার দর্পণে সাহিত্য, ভাষা ও নূতন পুস্তক সম্বন্ধে যেসকল সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছিল এই পুস্তকের দ্বিতীয় অর্থাৎ সাহিত্য বিভাগে তাহা সন্নিবেশিত হইয়াছে । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখিবার পক্ষে এ-সকল তথ্য অতিশয় প্রয়োজনীয়। বাংলা ভাষার রীতি কিরূপ হওয়া উচিত, তাহাতে বিদেশী শব্দ থাকা উচিত কি না, সংস্কৃত শব্দই বা কত দূর চালান যাইতে পারে, সে-সম্বন্ধে সে-যুগেই আলোচনা আরম্ভ হইয়াছিল। ৫৭-৫৯, ৬২-৬৬ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত অংশগুলিতে বাংলা গদ্যের ধারা, বাংলা ভাষায় বিদেশী শব্দের প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আছে। এই ত গেল ভাষার কথা। ইহা ছাড়া বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধেও বহু সংবাদ ‘সমাচার দর্পণে পাওয়া যায়। ৫ম-৬২ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে আলোচনা ও ৬৬-৯৭ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত নূতন পুস্তকের বিবরণ, এই দুইটি মিলাইয়া পড়িলে সে-যুগের বাংলা সাহিত্য ও পুস্তক সম্বন্ধে বহু নূতন তথ্য পাওয়া যাইবে । প্রথম যুগের মুদ্রিত বাংলা পুস্তক সম্বন্ধে এত দিন পৰ্য্যন্ত পাদরি লঙের তালিকাই আমাদের
পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা প্রথম খণ্ড.djvu/২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।