জন্মিবে মানবগৃহে নারীরূপ লয়ে
অনিন্দ্যসুন্দরী? এখন ভাসিছ তুমি
অনন্তের মাঝে; স্বর্গ হতে মর্তভূমি
করিছ বিহার; সন্ধ্যার কনকবর্ণে
রাঙিছ অঞ্চল; ঊষার গলিতস্বর্ণে
গড়িছ মেখলা; পূর্ণ তটিনীর জলে
করিছ বিস্তার তলতল-ছলছলে
ললিত যৌবনখানি; বসন্তবাতাসে
চঞ্চল বাসনাব্যথ। সুগন্ধ নিশ্বাসে
করিছ প্রকাশ; নিষুপ্ত পূর্ণিমারাতে
নির্জন গগনে, একাকিনী ক্লান্ত হাতে
বিছাইছ দুগ্ধশুভ্র বিরহশয়ন।
শরৎ-প্রত্যুষে উঠি করিছ চয়ন
শেফালি, গাঁথিতে মালা ভুলে গিয়ে শেষে
তরুতলে ফেলে দিয়ে আলুলিতকেশে
গভীর অরণ্যছায়ে উদাসিনী হয়ে
ব’সে থাক। ঝিকিমিকি আলোছায়া লয়ে
কম্পিত অঙ্গুলি দিয়ে বিকালবেলায়
বসন বয়ন কর বকুলতলায়।
অবসন্ন দিবালোকে কোথা হতে ধীরে
ঘনপল্লবিত কুঞ্জে সরোবরতীরে
করুণ কপোতকণ্ঠে গাও মূলতান।
কখন্ অজ্ঞাতে আসি ছুঁয়ে যাও প্রাণ
সকৌতুকে; করি দাও হৃদয় বিকল;
অঞ্চল ধরিতে গেলে পালাও চঞ্চল
কলকণ্ঠে হাসি; অসীম আকাঙ্ক্ষারাশি
জাগাইয়া প্রাণে, দ্রুতপদে, উপহাসি
মিলাইয়া যাও নভোনীলিমার মাঝে।
পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
সোনার তরী