পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৪১

কখনো মগন হয়ে আছি যবে কাজে
স্খলিতবসন তব শুভ্র রূপখানি
নগ্ন বিদ্যুতের আলো নয়নেতে হানি
চকিতে চমকি চলি যায়।— জানালায়
একেলা বসিয়া যবে আঁধার সন্ধ্যায়
মুখে হাত দিয়ে, মাতৃহীন বালকের
মতো, বহুক্ষণ কাঁদি স্নেহ-আলোকের
তরে—ইচ্ছা করি, নিশার আঁধারস্রোতে
মুছে ফেলে দিয়ে যায় সৃষ্টিপট হতে
এই ক্ষীণ অর্থহীন অস্তিত্বের রেখা—
তখন করুণাময়ী, দাও তুমি দেখা
তারকা-আলোক-জ্বালা স্তব্ধ রজনীর
প্রান্ত হতে নিঃশব্দে আসিয়া; অশ্রুনীর
অঞ্চলে মুছায়ে দাও; চাও মুখ পানে
স্নেহময় প্রশ্নভরা করুণ নয়ানে;
নয়ন চুম্বন কর; স্নিগ্ধ হস্তখানি
ললাটে বুলায়ে দাও; না কহিয়া বাণী,
সান্ত্বনা ভরিয়া প্রাণে কবিরে তোমার
ঘুম পাড়াইয়া দিয়া, কখন্ আবার
চলে যাও নিঃশব্দচরণে।

সেই তুমি
মূর্তিতে দিবে কি ধরা? এই মর্ত্যভূমি
পরশ করিবে রাঙা চরণের তলে?
অন্তরে বাহিরে বিশ্বে শূন্যে জলে স্থলে
সর্ব ঠাঁই হতে সর্বময়ী আপনারে
করিয়া হরণ, ধরণীর এক ধারে
ধরিবে কি একখানি মধুর মুরতি?