পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৪৫

কখন্‌ জ্বলিয়াছিল সন্ধ্যাদীপখানি,
কখন নিভিয়া গেছে কিছুই না জানি।

কী কথা বলিতেছিনু কী জানি প্রেয়সী,
অর্ধ-অচেতনভাবে মনোমাঝে পশি
স্বপ্নমুগ্ধমত। কেহ শুনেছিলে সে কি—
কিছু বুঝেছিলে প্রিয়ে— কোথাও আছে কি
কোনো অর্থ তার! সব কথা গেছি ভুলে;
শুধু এই নিদ্রাপূর্ণ নিশীথের কূলে
অন্তরের অন্তহীন অশ্রুপারাবার
উদ্‌বেলিয়া উঠিয়াছে হৃদয়ে আমার
গম্ভীর নিস্বনে।

এসো সুপ্তি, এসে। শান্তি,
এসো প্রিয়ে, মুগ্ধ মৌন সকরুণকান্তি,
বক্ষে মোরে লহো টানি; শোয়াও যতনে
মরণসুস্নিগ্ধ শুভ্র বিস্মৃতিশয়নে৷

বোট। শিলাইদহ
৪ পৌষ ১২৯৯


দুর্বোধ

তুমি মোরে পার না বুঝিতে?
প্রশান্তবিষাদভরে দুটি আঁখি প্রশ্ন ক’রে
অর্থ মোর চাহিছে খুঁজিতে,
চন্দ্রমা যেমন ভাবে স্থিরনতমুখে
চেয়ে দেখে সমুদ্রের বুকে।

কিছু আমি করি নি গোপন।
যাহা আছে সব আছে তোমার আঁখির কাছে
প্রসারিত অবারিত মন।