পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
সোনার তরী

কোথায় দূরে গেল সুরের খেলা, কোথায় তাল গেল ভাসি—
গানের সুতা ছিঁড়ি পড়িল খসি অশ্রুমুকুতার রাশি।
কোলের সখী তানপুরার ’পরে রাখিল লজ্জিত মাথা—
ভুলিল শেখা গান, পড়িল মনে বাল্য ক্রন্দন-গাথা।
নয়ন ছলছল, প্রতাপরায় কর বুলায় তার দেহে—
‘আইস, হেথা হতে আমরা যাই’ কহিল সকরুণ স্নেহে।
শতেক-দীপ-জ্বালা নয়নভরা ছাড়ি সে উৎসবঘর
বাহিরে গেল দুটি প্রাচীন সখা ধরিয়া দুঁহু দোঁহা কর।

বরজ করজোড়ে কহিল, ‘প্রভু, মোদের সভা হল ভঙ্গ।
এখন আসিয়াছে নূতন লোক, ধরায় নব নব রঙ্গ।
জগতে আমাদের বিজন সভা—কেবল তুমি আর আমি।
সেথায় আনিয়ো না নূতন শ্রোতা, মিনতি তব পদে স্বামী।
একাকী গায়কের নহে তো গান, মিলিতে হবে দুইজনে;
গাহিবে একজন খুলিয়া গলা, আরেকজন গাবে মনে।
তটের বুকে লাগে জলের ঢেউ তবে সে কলতান উঠে,
বাতাসে বনসভা শিহরি কাঁপে তবে সে মর্মর ফুটে।
জগতে যেথা যত রয়েছে ধ্বনি যুগল মিলিয়াছে আগে—
যেখানে প্রেম নাই, বোবার সভা, সেখানে গান নাহি জাগে।’

বোট। শিলাইদহ
২৪ আষাঢ় ১৩০০


প্রত্যাখ্যান

অমন দীন-নয়নে তুমি চেয়ো না।
অমন সুধা-করুণ সুরে গেয়ো না।
সকালবেলা সকল কাজে আসিতে যেতে পথের মাঝে
আমারি এই আঙিনা দিয়ে যেয়ো না।
অমন দীন-নয়নে তুমি চেয়ো না