সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।
হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটিবাধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব,
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব!’
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ—
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, ‘মারিয়া করিব খুন।’
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, ‘শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়।’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়।’
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে—
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।
নগরসংগীত
কোথা গেল সেই মহান্ শান্ত নবনির্মল শ্যামলকান্ত
উজ্জ্বলনীলবসনপ্রান্ত সুন্দর শুভ ধরণী!
আকাশ আলোকপুলকপুঞ্জ, ছায়াসুশীতল নিভৃত কুঞ্জ,
কোথা সে গভীর ভ্রমরগুঞ্জ— কোথা নিয়ে এল তরণী!
ওই রে নগরী, জনতারণ্য শত রাজপথ, গৃহ অগণ্য,
কতই বিপণি কতই পণ্য, কত কোলাহলকাকলি!
কত-না অর্থ কত অনর্থ আবিল করিছে স্বর্গমর্ত,
তপনতপ্ত ধূলি-আবর্ত উঠিছে শূন্য আকুলি৷