পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬২
চিত্রা

ত্যজিয়া যুগল স্বর্গ কঠিন পাষাণে।
কনকদর্পণখানি চাহে শূন্য-পানে
কার মুখ স্মরি। স্বর্ণপাত্রে সুসজ্জিত
চন্দনকুঙ্কুমপঙ্ক, লুণ্ঠিত লজ্জিত
দুটি রক্ত শতদল, অম্লানসুন্দর
শ্বেতকরবীর মালা, ধৌত শুক্লাম্বর
লঘু স্বচ্ছ পূর্ণিমার আকাশের মতো।
পরিপূর্ণ নীল নীর স্থির অনাহত,
কূলে কূলে প্রসারিত বিহ্বল গভীর
বুক-ভরা আলিঙ্গনরাশি। সরসীর
প্রান্তদেশে, বকুলের ঘনচ্ছায়াতলে
শ্বেতশিলাপটে, আবক্ষ ডুবায়ে জলে
বসিয়া সুন্দরী, কম্পমান ছায়াখানি
প্রসারিয়া স্বচ্ছ নীরে— বক্ষে লয়ে টানি
সযত্নপালিত শুভ্র রাজহংসটিরে
করিছে সোহাগ; নগ্ন বাহুপাশে ঘিরে
সুকোমল ডানাদুটি, লম্ব গ্রীবা তার
রাখি স্কন্ধ-’পরে কহিতেছে বারম্বার
স্নেহের প্রলাপবাণী; কোমল কপোল
বুলাইছে হংসপৃষ্ঠে পরশবিভোল।

চৌদিকে উঠিতেছিল মধুর রাগিণী
জলে স্থলে নভস্তলে। সুন্দর কাহিনী
কে যেন রচিতেছিল ছায়ারৌদ্রকরে,
অরণ্যের সুপ্তি আর পাতার মর্মরে,
বসন্তদিনের কত স্পন্দনে কম্পনে
নিশ্বাসে উচ্ছ্বাসে ভাষে আভাসে গুঞ্জনে
চমকে ঝলকে। যেন আকাশবীণার