পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৩৯

পূজারিনি

অবদানশতক

সেদিন শারদ-দিবা-অবসান, শ্রীমতী নামে সে দাসী
পুণ্যশীতল সলিলে নাহিয়া
পুষ্পপ্রদীপ থালায় বাহিয়া
রাজমহিষীর চরণে চাহিয়া নীরবে দাঁড়ালো আসি।
শিহরি সভয়ে মহিষী কহিলা, ‘এ কথা নাহি কি মনে,
অজাতশত্রু করেছে রটনা
স্তূপে যে করিবে অর্ঘ্যরচনা
শূলের উপরে মরিবে সে জনা অথবা নির্বাসনে!’

সেথা হতে ফিরি গেল চলি ধীরে বধূ অমিতার ঘরে।
সমুখে রাখিয়া স্বর্ণমুকুর
বাঁধিতেছিল সে দীর্ঘ চিকুর,
আঁকিতেছিল সে যত্নে সিঁদুর সীমন্তসীমা-’পরে।
শ্রীমতীরে হেরি বাঁকি গেল রেখা, কাঁপি গেল তার হাত—
কহিল, ‘অবোধ, কী সাহসবলে
এনেছিস পূজা! এখনি যা চলে—
কে কোথা দেখিবে, ঘটিবে তা হলে বিষম বিপদপাত।’

অস্তরবির রশ্মি-আভায় খোলা জানালার ধারে
কুমারী শুক্লা বসি একাকিনী
পড়িতে নিরত কাব্যকাহিনী,
চমকি উঠিল শুনি কিঙ্কিণী—চাহিয়া দেখিল দ্বারে।
শ্রীমতীরে হেরি পুঁথি রাখি ভূমে দ্রুতপদে গেল কাছে।
কহে সাবধানে তার কানে কানে,
‘রাজার আদেশ আজি কে না জানে—
এমন করে কি মরণের পানে ছুটিয়া চলিতে আছে!’