পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৪৯

উন্মত্ত অধীর। সে আমার অনুনয়ে
তব চুরি-অপবাদ নিজস্কন্ধে লয়ে
দিয়েছে আপন প্রাণ। এ জীবনে মম
সর্বাধিক পাপ মোর ওগো সর্বোত্তম,
করেছি তোমার লাগি, এ মোর গৌরব।’

ক্ষীণ চন্দ্র অস্ত গেল। অরণ্য নীরব
শতশত বিহঙ্গের সুপ্তি বহি শিরে
দাঁড়ায়ে রহিল স্তব্ধ। অতি ধীরে ধীরে
রমণীর কটি হতে প্রিয়বাহুডোর
শিথিল পড়িল খসে; বিচ্ছেদ কঠোর
নিঃশব্দে বসিল দোঁহা-মাঝে; বাক্যহীন
বজ্রসেন চেয়ে রহে আড়ষ্ট কঠিন
পাষাণপুত্তলি; মাথা রাখি তার পায়ে
ছিন্নলতাসম শামা পড়িল লুটায়ে
আলিঙ্গনচ্যূত৷; মসীকৃষ্ণ নদীনীরে
তীরের তিমিরপুঞ্জ ঘনাইল ধীরে।

সহসা যুবার জানু সবলে বাঁধিয়া
বাহুপাশে, আর্তনারী উঠিল কাঁদিয়া
অশ্রুহারা শুষ্ককণ্ঠে, ‘ক্ষমা করো নাথ,
এ পাপের যাহা দণ্ড সে অভিসম্পাত
হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর,
তোমা লাগি যা করেছি তুমি ক্ষমা করো।’
চরণ কাড়িয়া লয়ে চাহি তার পানে
বজ্রসেন বলি উঠে, ‘আমার এ প্রাণে
তোমার কী কাজ ছিল? এ জন্মের লাগি
তোর পাপমুল্যে কেনা মহাপাপভাগী