পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৪
কাহিনী

সে অন্তিম অভিমান! দগ্ধ হব আমি
নরক-অনল-মাঝে নিত্য দিনযামী,
তবু বৎস, তোর সেই নিমেষের ব্যথা,
আচম্বিত বহ্নিদাহে ভীত কাতরতা
পিতৃমুখ-পানে চেয়ে, পরম বিশ্বাস
চকিতে হইয়া ভঙ্গ মহা নিরাশ্বাস—
তার নাহি হবে পরিশোধ।

ধর্মের প্রবেশ

ধর্ম। মহারাজ, 
স্বর্গ অপেক্ষিয়া আছে তোমা তরে আজ;
চলো ত্বরা করি।
সোমক। সেথা মোর নাহি স্থান 
ধর্মরাজ। বধিয়াছি আপন সন্তান
বিনা পাপে।
ধর্ম। করিয়াছ প্রায়শ্চিত্ত তার 
অন্তরনরকানলে। সে পাপের ভার
ভস্ম হয়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। যে ব্রাহ্মণ
বিনা চিত্তপরিতাপে পরপুত্রধন
স্নেহবন্ধ হতে ছিঁড়ি করেছে বিনাশ
শাস্ত্রজ্ঞান-অভিমানে, তারি হেথা বাস
সমুচিত।
ঋত্বিক্। যেয়ো না, যেয়ো না তুমি চলে 
মহারাজ। সর্পশীর্ষ তীব্র ঈর্ষানলে
আমারে ফেলিয়া রাখি যেয়ো না, যেয়ো না
একাকী অমরলোকে। নূতন বেদনা
বাড়ায়ো না বেদনায় তীব্র দুর্বিষহ—
সৃজিয়ো না দ্বিতীয় নরক। রহো রহো,
মহারাজ, রহো হেথা।