পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৬
কাহিনী

বৎস, তোর জীবনের প্রথম প্রভাতে
পরিচয় করায়েছি তোরে বিশ্ব-সাথে,
সেই আমি আসিয়াছি ছাড়ি সর্ব লাজ
তোরে দিতে আপনার পরিচয় আজ।
কর্ণ। দেবী, তব নতনেত্রকিরণসম্পাতে 
চিত্ত বিগলিত মোর সূর্যকরঘাতে
শৈলতুষারের মতো। তব কণ্ঠস্বর
যেন পূর্বজন্ম হতে পশি কর্ণ-’পর
জাগাইছে অপূর্ব বেদনা। কহো মোরে,
জন্ম মোর বাঁধা আছে কী রহস্য-ডোরে
তোমা সাথে হে অপরিচিতা।
কুন্তী। ধৈর্য ধর্ 
ওরে বৎস, ক্ষণকাল। দেব দিবাকর
আগে যাক অস্তাচলে। সন্ধ্যার তিমির
আসুক নিবিড় হয়ে—কহি তোরে বীর,
কুন্তী আমি।
কর্ণ। তুমি কুন্তী! অর্জুনজননী। 
অর্জুনজননী বটে, তাই মনে গণি
কুন্তী। দ্বেষ করিয়ো না বৎস। আজো মনে পড়ে 
অস্ত্র পরীক্ষার দিন হস্তিনানগরে।
তুমি ধীরে প্রবেশিলে তরুণ কুমার
রঙ্গস্থলে, নক্ষত্রখচিত পূর্বাশার
প্রান্তদেশে নবোদিত অরুণের মতো।
যবনিকা-অন্তরালে নারী ছিল যত
তার মধ্যে বাক্যহীনা কে সে অভাগিনী
অতৃপ্ত স্নেহক্ষুধার সহস্র নাগিনী
জাগায়ে জর্জর বক্ষে; কাহার নয়ন
তোমার সর্বাঙ্গে দিল আশিসচুম্বন?