পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১২
ক্ষণিকা

যাদের সঙ্গে হয় নি মিলন সে-সব বরাঙ্গনা
বিচ্ছেদেরই দুঃখে আমায় করছে অন্যমনা।
তবু মনে প্রবোধ আছে, তেমনি বকুল ফোটে গাছে
যদিও সে পায় না নারীর মুখমদের ছিটা।
ফাগুন মাসে অশোক-ছায়ে অলস প্রাণে শিথিল গায়ে
দখিন হতে বাতাসটুকু তেমনি লাগে মিঠা।
অনেক দিকেই যায় যে পাওয়া অনেকটা সান্ত্বনা
রে নাইকো কোথাও সে-সব বরাঙ্গনা।

এখন যাঁরা বর্তমানে আছেন মর্তলোকে
ভালোই লাগত তাঁদের ছবি কালিদাসের চোখে।
পরেন বটে জুতামোজা, চলেন বটে সোজা সোজা,
বলেন বটে কথাবার্তা অন্যদেশীর চালে,
তবু দেখো সেই কটাক্ষ আঁখির কোণে দিচ্ছে সাক্ষ্য
যেমনটি ঠিক দেখা যেত কালিদাসের কালে।
মরব না ভাই, নিপুণিকা চতুরিকার শোকে—
তাঁরা সবাই অন্য নামে আছেন মর্তলোকে।

আপাতত এই আনন্দে গর্বে বেড়াই নেচে—
কালিদাস তো নামেই আছেন, আমি আছি বেঁচে।
তাঁহার কালের স্বাদগন্ধ আমি তো পাই মৃদুমন্দ,
আমার কালের কণামাত্র পান নি মহাকবি।
দুলিয়ে বেণী চলেন যিনি এই আধুনিক বিনোদিনী
মহাকবির কল্পনাতে ছিল না তাঁর ছবি।
প্রিয়ে, তোমার তরুণ আঁখির প্রসাদ যেচে যেচে
কালিদাসকে হারিয়ে দিয়ে গর্বে বেড়াই নেচে।