পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৬
খেয়া

কত কালে কত লোকে কত দিনের শেষে
ধুয়েছিল পথের ধুলা এইখানেতে এসে।
বসেছিল জ্যোৎস্নারাতে স্নিগ্ধ শীতল আঙিনাতে,
কয়েছিল সবাই মিলে নানা দেশের কথা।
প্রভাত হলে পাখির গানে জেগেছিল নূতন প্রাণে,
দুলেছিল ফুলের ভারে পথের তরুলতা।

আমি যেদিন এলেম সেদিন দীপ জ্বলে না ঘরে,
বহুদিনের শিখার কালী আঁকা ভিতের ’পরে।
শুষ্কজলা দিঘির পাড়ে জোনাক ফিরে ঝোপে-ঝাড়ে,
ভাঙা পথে বাঁশের শাখা ফেলে ভয়ের ছায়া।
আমার দিনের যাত্রাশেষে কার অতিথি হলেম এসে!
হায় রে বিজন দীর্ঘ রাজি, হায় রে ক্লান্ত কায়া।

 ৮ বৈশাখ ১৩১৩


প্রতীক্ষা

আমি এখন সময় করেছি,
তোমার এবার সময় কখন হবে!
সাঁঝের প্রদীপ সাজিয়ে ধরেছি,
শিখা তাহার জ্বালিয়ে দেবে কবে!
নামিয়ে দিয়ে এসেছি সব বোঝা,
তরী আমার বেঁধে এলেম ঘাটে,
পথে পথে ছেড়েছি সব খোঁজা
কেনাবেচা নানান হাটে হাটে।

সন্ধ্যাবেলায় যে মল্লিকা ফুটে
গন্ধ তারি কুঞ্জে উঠে জাগি।
ভরেছি জুঁই পদ্মপাতার পুটে
তোমার করপদ্মদলের লাগি।