পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাতকা
৫৬৫

যে ছিল তার ছেলেবেলার খেলাঘরের সাথি
আজ সে কেমন করে
জলস্থলের হৃদয়খানি দিল ভরে!
অরূপ হয়ে সে যেন আজ সকল রূপে রূপে
মিশিয়ে গেল চুপে চুপে।
পায়ের শব্দ তারি
মর্মরিত পাতায় পাতায় গিয়েছে সঞ্চারি।
কানে কানে তারি করুণ বাণী
মৌমাছিদের পাখার গুন্‌গুনানি।

মেয়ের নীরব মুখে
কী দেখে মা, শেল বাজে তার বুকে।
না-বলা কোন্ গোপন কথার মায়া
মঞ্জুলিকার কালো চোখে ঘনিয়ে তোলে জল-ভরা এক ছায়া;
অশ্রু-ভেজা গভীর প্রাণের ব্যথা
এনে দিল অধরে তার শরৎনিশির স্তব্ধ ব্যাকুলতা।
মায়ের মুখে অন্ন রোচে নাকো;
কেঁদে বলে, ‘হায় ভগবান, অভাগিরে ফেলে কোথায় থাক!’

একদা বাপ দুপুরবেলায় ভোজন সাঙ্গ ক’রে
গুড়গুড়িটার নলটা মুখে ধ’রে
ঘুমের আগে যেমন চিরাভ্যাস
পড়তেছিলেন ইংরেজি এক প্রেমের উপন্যাস।
মা বললেন বাতাস করে গায়ে,
কখনো বা হাত বুলিয়ে পায়ে,
‘যার খুশি সে নিন্দে করুক, মরুক বিষে জ’রে,
আমি কিন্তু পারি যেমন করে
মঞ্জুলিকার দেবই দেব বিয়ে।’