পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহুয়া
৬২৩

বোধন

মাঘের সূর্য উত্তরায়ণে পার হয়ে এল চলি,
তার পানে হায় শেষ চাওয়া চায় করুণ কুন্দকলি।
উত্তরবায় একতারা তার
তীব্র নিখাদে দিল ঝংকার,
শিথিল যা ছিল তারে ঝরাইল, গেল তারে দলি দলি।

শীতের রথের ঘূর্ণিধূলিতে গোধূলিরে করে ম্লান’,
তাহারি আড়ালে নবীন কালের কে আসিছে সে কি জান?
বনে বনে তাই আশ্বাসবাণী
করে কানাকানি ‘কে আসে কী জানি’,
বলে মর্মরে ‘অতিথির তরে অর্ঘ্য সাজায়ে আনো’।

নির্মম শীত তারি আয়োজনে এসেছিল বনপারে;
মার্জিয়া দিল শ্রান্তি ক্লান্তি, মার্জনা নাহি কারে।
ম্লান চেতনার আবর্জনায়
পান্থের পথে বিঘ্ন ঘনায়,
নবযৌবনদূতরূপী শীত দূর করি দিল তারে।

ভরা পাত্রটি শূন্য করে সে ভরিতে নূতন করি,
অপব্যয়ের ভয় নাহি তার পূর্ণের দান স্মরি।
অলস ভোগের গ্লানি সে ঘুচায়,
মৃত্যুর স্নানে কালিমা মুছায়,
চিরপুরাতনে করে উজ্জ্বল নূতন চেতনা ভরি।

নিত্যকালের মায়াবী আসিছে নব পরিচয় দিতে,
নবীন রূপের অপরূপ জাদু আনিবে সে ধরণীতে।
লক্ষ্মীর দান নিমেষে উজাড়ি
নির্ভয়মনে দূরে দেয় পাড়ি,
নববর সেজে চাহে লক্ষ্মীরে ফিরে জয় করে নিতে।