বাঁধন-ছেঁড়ার সাধন তাহার, সৃষ্টি তাহার খেলা;
দস্যুর মতো ভেঙেচুরে দেয় চিরাভ্যাসের মেলা।
মূল্যহীনেরে সোনা করিবার
পরশপাথর হাতে আছে তার,
তাই তো প্রাচীন সঞ্চিত ধনে উদ্ধত অবহেলা।
বলো ‘জয় জয়’ বলো ‘নাহি ভয়’— কালের প্রয়াণপথে
আসে নির্দয় নবযৌবন ভাঙনের মহারথে।
চিরন্তনের চঞ্চলতায়
কাঁপন লাগুক লতায় লতায়,
থরথর করি উঠুক পরান প্রান্তরে পর্বতে।
বার্তা ব্যাপিল পাতায় পাতায়, ‘করো ত্বরা, করো ত্বরা।
সাজাক পলাশ আরতিপাত্র রক্তপ্রদীপে ভরা।
দাড়িম্ববন প্রচুর পরাগে
হোক প্রগল্ভ রক্তিম রাগে,
মাধবিকা হোক সুরভিসোহাগে মধুপের মনোহরা।’
কে বাঁধে শিথিল বীণার তন্ত্র কঠোর যতনভরে—
ঝংকারি উঠে অপরিচিতার জয়সংগীতস্বরে।
নগ্ন শিমুলে কার ভাণ্ডার
রক্ত দুকূল দিল উপহার—
দ্বিধা না রহিল বকুলের আর রিক্ত হবার তরে।
দেখিতে দেখিতে কী হতে কী হল, শূন্য কে দিল ভরি!
প্রাণবন্যায় উঠিল ফেনায়ে মাধুরীর মঞ্জরি।
ফাগুনের আলো সোনার কাঠিতে
কী মায়া লাগালো, তাই তো মাটিতে
নবজীবনের বিপুল ব্যথায় জাগে শ্যামাসুন্দরী ৷
দোলপূর্ণিমা। ২২ ফাল্গুন ১৩৩৪