পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানসী
৬১

নাই সুর, নাই ছন্দ, অর্থহীন নিরানন্দ
জড়ের নর্তন।
সহস্র জীবনে বেঁচে ওই কি উঠেছে নেচে
প্রকাণ্ড মরণ!
জল বাষ্প বজ্র বায়ু লভিয়াছে অন্ধ আয়ু,
নূতন জীবনস্নায়ু টানিছে হতাশে—
দিগ্বিদিক্ নাহি জানে,  বাধা বিঘ্ন নাহি মানে,
ছুটেছে প্রলয়-পানে আপনারি ত্রাসে।
হেরো, মাঝখানে তারি আটশত নরনারী
বাহু বাঁধি বুকে
প্রাণে আঁকড়িয়া প্রাণ চাহিয়া সম্মুখে।

তরণী ধরিয়া ঝাঁকে, রাক্ষসী ঝটিকা হাঁকে
‘দাও দাও দাও’।
সিন্ধু ফেনোচ্ছল ছলে  কোটি ঊর্ধ্বকরে বলে
‘দাও দাও দাও’।
বিলম্ব দেখিয়া রোষে  ফেনায়ে ফেনায়ে ফোঁষে,
নীল মৃত্যু মহাক্রোশে শ্বেত হয়ে উঠে।
ক্ষুদ্র তরী গুরু ভার সহিতে পারে না আর,
লৌহবক্ষ ওই তার যায় বুঝি টুটে।
অধ ঊর্ধ্ব এক হয়ে ক্ষুদ্র এ খেলেনা লয়ে
খেলিবারে চায়।
দাঁড়াইয়া কর্ণধার তরীর মাথায়।

নরনারী কম্পমান ডাকিতেছে, ‘ভগবান,
হায় ভগবান!’
‘দয়া করে৷, দয়া করো’ উঠিছে কাতর স্বর,
‘রাখো রাখে। প্রাণ।’