পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬০
পুনশ্চ

উলঙ্গ সাঁওতালের ছেলে পিঠের উপরে।
বাসাবাড়ি কোথাও নেই—
তাই তাঁবু পাতলেম নদীর ধারে।
সঙ্গী ছিল না কেউ,
কেবল ছিল সেই ক্যামেলিয়া।

কমলা এসেছে মাকে নিয়ে।
রোদ ওঠবার আগে
হিমে-ছোঁওয়া স্নিগ্ধ হাওয়ায়
শালবাগানের ভিতর দিয়ে বেড়াতে যায় ছাতি হাতে,
মেঠো ফুলগুলো পায়ে এসে মাথা কোটে—
কিন্তু সে কি চেয়ে দেখে?
অল্পজল নদী পায়ে হেঁটে
পেরিয়ে যায় ও পারে,
সেখানে সিসুগাছের তলায় বই পড়ে।
আর, আমাকে সে যে চিনেছে
তা জানলেম আমাকে লক্ষ্য করে না ব’লেই।
একদিন দেখি, নদীর ধারে বালির উপর ওদের চড়িভাতি।
ইচ্ছে হল গিয়ে বলি,
আমাকে দরকার কি নেই কিছুতেই?
আমি পারি জল তুলে আনতে নদী থেকে,
পারি বন থেকে কাঠ আনতে কেটে—
আর, তা ছাড়া কাছাকাছি জঙ্গলের মধ্যে
একটা ভদ্রগোছের ভালুকও কি মেলে না?

দেখলেম দলের মধ্যে একজন যুবক—
শর্ট পরা, গায়ে রেশমের বিলিতি জামা,
কমলার পাশে পা ছড়িয়ে
হাভানা চুরট খাচ্ছে।