পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬৬
পুনশ্চ

অন্ন জুটত না সব সময়ে,
গতি ছিল না চুরি ছাড়া,
সেই অপকর্মের মুখে তার চতুর্থ পা হয়েছিল খোঁড়া।
আর, সেইসঙ্গেই কোন্ কার্যকারণের যোগে
শাসনকর্তাদের শসাখেতের বেড়। গিয়েছিল ভেঙে।
মনিবের বিছানা ছাড়া কুকুরটার ঘুম হ’ত না রাতে,
তাকে নইলে মনিবেরও সেই দশা।
একদিন প্রতিবেশীর বাড়া ভাতে মুখ দিতে গিয়ে
তার দেহান্তর ঘটল।
মরণাস্তিক দুঃখেও কোনোদিন জল বেরোয় নি যে ছেলের চোখে
দুদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদে কেঁদে বেড়ালো,
মুখে অন্নজল রুচল না—
বক্সিদের বাগানে পেকেছে করম্‌চা,
চুরি করতে উৎসাহ হল না।
সেই প্রতিবেশীদের ভাগনে ছিল সাত বছরের,
তার মাথার উপর চাপিয়ে দিয়ে এল এক ভাঙা হাঁড়ি—
হাঁড়ি-চাপা তার কান্না শোনালো যেন ঘানিকলের বাঁশি।

গেরস্তঘরে ঢুকলেই সবাই তাকে ‘দূর দুর’ করে,
কেবল তাকে ডেকে এনে দুধ খাওয়ায় সিধু গয়লানি
তার ছেলেটি মরে গেছে সাত বছর হল—
বয়সে ওর সঙ্গে তিন দিনের তফাত,
ওরই মতো কালোকোলো,
নাকটা ওইরকম চ্যাপটা।
ছেলেটার নতুন নতুন দৌরাত্মি এই গয়লানি মাসির ’পরে—
তার বাঁধা গোরুর দড়ি দেয় কেটে,
তার ভাঁড় রাখে লুকিয়ে,
খয়েরের রঙ লাগিয়ে দেয় তার কাপড়ে।