পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছড়ার ছবি
৭৬৫

খোঁজ পড়ে যায় যেমনি কিছু শোনে কানাঘুষায়;
খোঁজে পিণ্ডিদাদনখাঁয়ে, খোঁজে লালামুসায়।
খুঁজে খুঁজে লুধিয়ানায় ঘুরেছে পঞ্জাবে;
গুলজারপুর হয় নি দেখা, শুনছি পরে যাবে।
চঙ্গামঙ্গা দেখে এল সবাই আলমগিরে;
রাওলপিণ্ডি থেকে এল হতাশ হয়ে ফিরে।

ইতিমধ্যে যোগিন্‌দাদা হাৎরাশ জংশনে
গেছেন লেগে চায়ের সঙ্গে পাউরুটি-দংশনে।
দিব্যি চলছে খাওয়া,
তারি সঙ্গে খোলা গায়ে লাগছে মিঠে হাওয়া—
এমন সময় সেলাম করলে জৌনপুরের চর;
জোড়হাতে কয়, ‘রাজাসাহেব, কঁহা আপ্‌কা ঘর?’
দাদা ভাবলেন, সম্মানটা নিতান্ত জমকালো,
আসল পরিচয়টা তবে না দেওয়াই তো ভালো।
ভাবখানা তাঁর দেখে চরের ঘনালো সন্দেহ—
এ মানুষটি রাজপুত্রই, নয় কভু আর-কেহ।
রাজলক্ষণ এতগুলো একখানা এই গায়,
ওরে বাস্ রে, দেখে নি সে আর কোনো জায়গায়।

তার পরে মাস-পাঁচেক গেছে দুঃখে সুখে কেটে;
হারাধনের খবর গেল জৌনপুরের স্টেটে।
ইস্টেশনে নির্ভাবনায় বসে আছেন দাদা—
কেমন করে কী যে হল, লাগল বিষম ধাঁধা।
গুর্খা ফউজ সেলাম ক’রে দাঁড়ালো চার দিকে;
ইস্টেশনটা ভরে গেল আফগানে আর শিখে।
ঘিরে তাঁকে নিয়ে গেল কোথায় ইটার্সিতে;
দেয় কারা সব জয়ধ্বনি উর্‌দুতে ফার্সিতে।