পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮০
সেঁজুতি

হৈ হৈ রবে; হাটবারে ভোরবেলা
বস্তা-বহা গোরুটাকে তাড়া দিয়ে ঠেলা;
আঁকড়িয়া মহিষের গলা
ও পারে মাঠের পানে রাখাল ছেলের ভেসে চলা।

নিত্য-জানা সংসারের প্রাণলীলা না উঠিতে ফুটে
যাত্রী লয়ে অন্ধকারে গাড়ি যায় ছুটে।

যেতে যেতে পথপাশে
পানা-পুকুরের গন্ধ আসে,
সেই গন্ধে পায় মন
বহু দিনরজনীর সকরুণ স্নিগ্ধ আলিঙ্গন
আঁকাবাঁকা গলি
রেলের স্টেশনপথে গেছে চলি;
দুই পাশে বাসা সারি সারি;
নরনারী
যে যাহার ঘরে
রহিল আরামশয্যা-’পরে।
নিবিড়-আঁধার-ঢালা আমবাগানের ফাঁকে
অসীমের টিকা দিয়া বরণ করিয়া স্তব্ধতাকে
শুকতারা দিল দেখা।
পথিক চলিল একা
অচেতন অসংখ্যের মাঝে।
সাথে সাথে জনশূন্য পথ দিয়ে বাজে
রথের চাকার শব্দ হৃদয়বিহীন ব্যস্ত সুরে
দূর হতে দূরে।

শ্রীনিকেতন
২২ নভেম্বর ১৯৩৬