পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

 প্রতিবাসিনীরা আসিয়াছে। স্বর্গ-মর্ত্ত্যের বিখ্যাত সুন্দরীগণ আসিয়াছে। কুটম্বিনীগণ আসিয়াছে। সকলেই বলিতেছে, সতী আসিবে না। শুনিয়া শেল-বিদ্ধা হরিণীর ন্যায় প্রসূতি উঠিয়া যাইতেছেন। প্রসূতির নিকট আত্মীয়া কর্দ্দমঋষি-কন্যা অনসূয়া আসিয়াছেন। একদল দেবকন্যা তাঁহাকে ঘিরিয়া তৎপুত্র দত্তাত্রেয়ের রূপমাধুরী ও ক্রিয়াকলাপ দেখিয়া প্রশংসা করিতেছেন। বালকের চন্দ্রমুখ দেখিয়া প্রসূতির সতীর কথা মনে হইল, অমনি অঞ্চলে চক্ষু মুছিতে মুছিতে তিনি অন্যত্র চলিয়া গেলেন। মরীচি ঋষির স্ত্রী কলা বাপীতীরে বসিয়া আম্রবাটিকশ্রেণী দেখিতেছিলেন। একটি মঞ্জরীপূর্ণ আম্রতরু দেখাইয়া কলা শুধাইলেন, “রাণি, এই গাছগুলি কত বৎসরের?”

 প্রসূতি বলিলেন, “এগুলি আমার মেয়ে সতী বিবাহের বৎসর রোপণ করিয়া গিয়াছে”—এই বলিতে যাইয়া তাঁহার কণ্ঠ নিরুদ্ধ হইয়া আসিল। সতীর জন্য তিনি পাগলিনীর মত কাঁদিতে লাগিলেন।

 মরীচি, অঙ্গিরা, অত্রি প্রভৃতি ঋষিগণ বসিয়া হোমাগ্নি প্রজ্বলিত করিতেছেন। অগ্নিদেব স্বয়ং জামাতৃবেশে দক্ষের দক্ষিণ দিকে বেড়াইতেছেন। ধর্ম্মরাজ শ্বশুরের প্রতি অতিরিক্ত সম্ভ্রম দেখাইয়া নগ্ন পদে ছুটাছুটি করিতেছেন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা শেষ সময়ে আসিবেন বলিয়া সংবাদ পাঠাইয়াছেন। দক্ষের তেজোদীপ্ত ললাটের শিখা অভিমানে স্ফীত। কিন্তু দেবগণ সকলেই একটা অভাব বুঝিতেছেন। অগ্নি স্বয়ং চেষ্টা করিয়াও হোমাগ্নিকে উজ্জ্বলতা দিতে পারিতেছেন না। শ্মশানবিহারী ভিখারী শিবের অভাবে যেন উৎসবের আনন্দ কতকটা স্তিমিত হইয়া গিয়াছে। বৃহস্পতির বাগ্মিতা লয় পাইয়াছে। তিনি মৌনভাবে দক্ষের বামদিকে অজিনাসনে বসিয়া কি চিন্তা করিতেছেন!

২৯