পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

হইল, তাঁহার নিশ্বাসে যজ্ঞকর্ম্ম নির্ম্মলতর হইল, তাঁহার জটাবন্ধ রক্তবর্ণ জবা শিবের ক্রোধের ন্যায় যেন ধ্বক্‌ধ্বক্‌ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল। এই অপূর্ব্ববেশী কন্যাকে দেখিয়া মদগর্ব্বিত দক্ষ ক্রুদ্ধস্বরে বলিলেন, “সতি! তোর কপালে যা ছিল তাহা ঘটেছে, এখন তুই মনে কর যেন তুই বিধবা, সধবা হইয়াও ত বিধবার বেশেই আছিস, মনে করিতে বিশেষ কষ্টকল্পনা করিতে হইবে না। তুই কি প্রজাপতিগণের অধীশ্বর, সৃষ্টিকর্ত্তা ব্রহ্মার প্রিয়তম মানসপুত্র দক্ষের কন্যা, না সেই ধুস্তূরসিদ্ধিসেবী, কুসুম্ভাপ্রিয় ভাঙ্গড়ের স্ত্রী? তুই এই বেশে এখানে আসিতে লজ্জা বোধ করিলি না! ভৃগুর যজ্ঞসভায় সমস্ত দেবমণ্ডলীর সমক্ষে আমি তাহাকে প্রহার করিতে বাকী রাখিয়াছিলাম, সেই অপমানসত্ত্বেও তোকে আবার পাঠাইল কোন্‌ মুখে? ভূতপ্রেতের সঙ্গী, চিতাভস্মপ্রিয় জন্তুর হস্তে তোকে দিয়াছি, শুধু পিতৃইচ্ছায়। এখন তুই মরিলে আমার এ লজ্জা দূর হয়। তুই নাকি বড় পতিব্রতা! তবে কি জানিস্‌ না যে, দুরাত্মা বৃষারূঢ় শিবকে আমি দেব-সমাজ হইতে নিষ্কাষিত করিয়া দিয়াছি; যজ্ঞভাগে তাহার কোন অধিকার নাই; তথাপি তুই কেন এসেছিস্? এই কি তোর পতিভক্তি? সে সাপুড়ে, পার্ব্বত্যরাজ্যের অসভ্য, জাতি-কুলের বিচারহীন, বর্ণাশ্রম মানে না; তাহার লঘুগুরুভেদ নাই। আমি তোকে আমার আলয়ে স্থান দিতে পারি, যদি প্রায়শ্চিত্ত করিয়া কৈলাসে আর কখনও যাইতে পারিবি না বলিয়া অঙ্গীকার করিস্‌।”

 ভৃগু এই নিন্দাবাদে পরম প্রীতিলাভ করিয়া শ্মশ্রু দোলাইতে লাগিলেন, এবং মহাহর্ষে পূষা ঋষির সমস্ত দন্তপংক্তি কেতকীকুসুমের ন্যায় বিকশিত হইয়া পড়িল। অপর অপর ঋষিরাও দক্ষের কথা অনুমোদন-পূর্ব্বক ক্রমাগত শিবের কাহিনী কীর্ত্তন করিয়া তাঁহাকে

৪৫