পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সতী

নির্নিমেষ দৃষ্টিতে ত্রিনেত্র স্থির করিয়া অভ্যাগতের পন্থার দিকে বন্ধলক্ষ্য হইলেন।

 এ কে? এই অসংযত জটাকলাপ, শূল-বিচ্যুত নন্দী আসিতেছে। মা’ মা’ রবে কাঁদিয়া সে দিঙ্‌মণ্ডল বিদীর্ণ করিয়া ফেলিতেছে। তাহারই উন্মত্ত, শোকার্ত্ত বিদ্রুতগতিতে কৈলাসগিরির প্রকম্পন হইতেছে; ছিন্ন শালবৃক্ষ কিংবা ভগ্ন ইন্দ্রধ্বজ, অথবা ব্যোমচ্যুত ধূমকেতুর ন্যায় হাহাকার করিয়া নন্দিকেশ্বর শিবের পাদমূলে পতিত হইল।

 শিবের কিছুই বুঝিতে বাকি রহিল না। শান্ত সমুদ্রের ন্যায় শিব প্রলয়কালে বিশ্ব-বিনাশ করিয়া থাকেন। যখন দেবদারু-মূলে প্রফুল্ল কমলসদৃশ করদ্বয় অঙ্কে স্থাপন করিয়া ইনি ধ্যানস্থ থাকেন, তখন কে বুঝিতে পারে, প্রলয় কালে এই শিবের প্রশান্ত জটাজুট ব্যোমের সমস্ত দিকে উত্তপ্ত লৌহশলাকার ন্যায় বিকীর্ণ হইয় পড়ে? তখন কে বুঝিতে পারে, ইঁহার করধৃত শূলাগ্রে দিগ্‌হস্তিগণ বিদ্ধ হইয়া উৎক্ষিপ্ত হয় এবং ইঁহার উচ্চ ও কঠোর হাস্যধ্বনিতে মেঘ সকল বিদীর্ণ হইয়া যায় এবং তাঁহার রৌদ্র-তাণ্ডবে নক্ষত্রগণ কক্ষচ্যুত হয়?

 আজ সেই প্রলয়কালীন বিষাণ সহসা বাজাইয়া মহাদেব তাণ্ডব নৃত্য করিতে লাগিলেন। তাঁহার জট জ্বলন্ত হুতাশনের ন্যায় জ্বলিতে লাগিল, অট্টহাস্য করিয়া তিনি একগাছি জটা ভূতলে নিক্ষেপ করিলেন।

 সেই জটা-পতনে ভয়ঙ্কর বীরভদ্র বীর সমুত্থিত হইল, তাহার মস্তকের কৃষ্ণ মেঘোপম মুকুট গগনাবলম্বী হইয়া রহিল এবং হস্তের শূল কৃতান্তনাশক তীক্ষ্ণতা প্রাপ্ত হইয়া হত্যাকার্য্যের প্রতীক্ষা করিতে লাগিল।

৪৯