পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৫২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১

 মহাবাত্যার পর প্রশান্ত প্রকৃতির ন্যায় শিব বিল্বমূলে বসিয়াছিলেন। তিনি সতীর চিন্তা পরিহারপূর্ব্বক ধ্যান-নিমগ্ন ছিলেন। সেই যোগানন্দ উদয়ের সঙ্গে তদীয় বিম্বাধরে পুনরায় প্রশান্ত উদাসীনের হাস্য-রেখা অঙ্কিত হইতেছিল।

 ব্রহ্মার কমণ্ডলু ও বিষ্ণুর চক্র যুগপৎ তাঁহার পদস্পর্শ করাতে তদীয় ধ্যান ভঙ্গ হইল, তখন সতীর জন্য হৃদয়ে দারুণ জ্বালা অনুভব করিলেন। তিনি ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে দেখিয়া বলিলেন, “দক্ষের জন্য আপনারা আসিয়াছেন, আমি নন্দীর আর্ত্তনাদে মুহূর্ত্তকাল আত্মবিস্মৃত হইয়া ক্রুদ্ধ হইয়াছিলাম, তখন কি হইয়াছে জানি না। যদি দক্ষ বিনষ্ট হইয়া থাকেন, তাহা জগতের ইষ্টের জন্য। দক্ষ আমাকে প্রত্যাখ্যান করিয়া জগতের সমস্ত বৈভব-বিতৃষ্ণ মুমুক্ষু ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। যাঁহারা দৈহিক সুখের পক্ষপাতী নহেন, বিশ্ব-স্থিত যাঁহাদের মূলমন্ত্র, এমন সকল ঋষি যজ্ঞে উপস্থিত হন নাই। দক্ষ আমাকে ত্যাগ করিয়া তাঁহাদিগকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। যে বাহ্যদারিদ্র্য না হইলে চিত্তের শ্রীবৃদ্ধি হয় না, আমাকে প্রত্যাখ্যান করিয়া সেই দারিদ্র্যের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করিয়াছেন। আর স্ত্রীলোকের যে একনিষ্ঠ প্রেম-যোগ, সতীর মৃত্যুতে দক্ষের হস্তে তাহারই অবমাননা সূচিত হইতেছে। বিশ্বের মঙ্গল-দ্রোহী এরূপ দাম্ভিকের প্রভুত্ব ধরিত্রী সহ্য করিতে পারেন নাই।”

 দেবগণ বলিলেন, “হে মঙ্গল-আলয়! জগতের ইষ্টের বিঘ্ন না হইলে রুদ্রের রৌদ্র ভাব বিকাশ পায় না, বিশ্বের প্রয়োজনেই স্বয়ম্ভুর

৫২