পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় বর্ষ, দশম সংখ্যা g RINN) ফলাফুলের সৌন্দর্ঘ্যে মুগ্ধ হবার সম্ভাবনা অতি অল্প। আমি অতিমাত্রায় লালায়িত হলুম। পল্লীবালাদের স্বভাবসৌন্দৰ্য্যটুকুর দর্শনের জন্য। কি একটা বইতে পড়েছিলুম এক জাতের রমণী আছেন, তঁরা নাকি পদ্ম-গন্ধী। কিন্তু কলকাতা সহরে সেই জাতির স্ত্রীলোক একেবারেই দুর্লভ। টবের ফুলেরও ত গন্ধ নেই। কলকাতায় যাদের পরিচয় পাই, তারা বিলেতি এসেন্সের যোগে তীব্ৰগন্ধী। মানুষের হাতে গড়া কাগজের ফুলের মত বাহারটুকুন তাদের ষোল আনাই আছে। গাছের ফুলের কমনীয়তাও তাদের নেই, সৌরভ ত দুরের কথা । পল্লীদর্শনের’লোভ আমাকে বড়ই বিব্রত করে তুললে, আমি একেবারে অধীর হয়ে পড়লুম। হরিহরপুরে আমাদের জমিদারীর এক কাছারী ছিল। স্থির করলুম। আমার বন্ধু হরেন আর দুইজনু শিকারী সঙ্গে করে সেখানেই শিকার কৰ্ত্তে যাব। যেমন Turgenev গিয়েছিলেন । তখনি নায়েবের কাছে টেলিগ্ৰাফ গেল । পরদিন রাত বারোটার গাড়িতে আমরা রওনা হলুম। চড়লুম ফাষ্টক্লাসে। আরামের কোন ব্যাঘাত হ’ল না । ক্রমে চোখ বুজে এল। ঠিক নিদ্রা নয় ;-নিদ্রার কেমন একটু আবেশে আমি এলিয়ে পড়লুম। আমার মনের উপর কত কল্পনা এসে খেলে যেতে লাগিল । দেখলুম কি সুন্দর এক দেশ। সে দেশ যেন চির-বসন্তের। সবুজ পাতায় সবুজ ঘাসে সব মোড়া, সব রাঙানো। কোকিলের কুজনে, পাপিয়ার তানে মুখরিত। সেখানে রবির প্রখর তাপ ধারণীর অন্তর দগ্ধ করে না। সুৰ্য্যের রশ্মি যেন মুধুর হাসি হেসে একেবারে আট খানা হয়ে প্রকৃতির বুকের উপর লুটিয়ে পড়ে।