পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

მხs সবুজ পত্র চৈত্র, ১৩২৩ করা যায় যে, জয়দেকের বসন্তবর্ণনা কাল্পনিক-অর্থাৎ সাদা ভাষায় যাকে বলে অলীক । যার প্রথম কথাই মিথ্যে, তার কোন কথায় বিশ্বাস করা যায় না। ;-অতএব ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, এই কবিবৰ্ণিত বসন্ত আগাগোড়া মনগড়া । জয়দেব যখন নিজের চোখে দেখে বৰ্ণনা করেন নি, তখন তিনি অবশ্য তঁর পূর্ববৰ্ত্তী কবিদের বই থেকে বসন্তের উপাদান সংগ্ৰহ করেছিলেন ; এবং কবিপরম্পরায় আমরাও তাই করে আসছি। ” সুতরাং এ সন্দেহ স্বতঃই মনে উদয় হয় যে, বসন্তঋতু। এব্বটা কবিপ্ৰসিদ্ধিমাত্র -ও বস্তুর বাস্তবিক কোনও অস্তিত্ব নেই। রমণীর পদতাড়নার অপেক্ষা না রেখে, অশোক যে ফুল ফোটায়, তার গায়ে যে আলতার রঙ দেখা দেয়, এবং ললনাদের মুখমন্দ্যাসিক্ত না হলেও বকুল ফুলের মুখে যে মদের গন্ধ পাওয়া যায়,—এ কথা আমরা সকলেই জানি। এ দুটি কবিপ্ৰসিদ্ধির মূলে আছে, মানুষের • ঔচিত্য-জ্ঞান | প্ৰকৃতির যথার্থ কাৰ্য্যকারণের সন্ধান পেলেই বৈজ্ঞানিক কৃতাৰ্থ হন - . কিন্তু কবি কল্পনা করেন। তাই, যা হওয়া উচিত ছিল । কবির উক্তি হচ্ছে প্ৰকৃতির।’ যুক্তির প্রতিবাদ । কবি চান সুন্দর, প্রকৃতি দেন তার বদলে সত্য । একজন ইংরাজ কবি বলেছেন যে, সত্য ও সুন্দর একই বস্তু-কিন্তু সে শুধু বৈজ্ঞানিকদের মুখ বন্ধ করবার জন্য। তঁর মনের কথা এই যে, ” যা সত্য তা অবশ্য সুন্দর নয়, কিন্তু যা সুন্দর তা অবশ্যই সত্য ; অর্থাৎ তার সত্য হওয়া উচিত ছিল। তাই আমার মনে হয় যে, পৃথিবীতে বসন্তঋতু থাকা উচিত- —এই ধারণাবশতঃ সেকালের কবিরা কল্পনা- ৷ বলে উক্ত ঋতুর সৃষ্টি করেছেন। বসন্তের সকল উপাদানই ভীরা মন-অঙ্কে সংগ্ৰহ করে, প্ৰকৃতির গায়ে তা বসিয়ে দিয়েছেন।