পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা পত্র ১০৭ উঠেছে। অন্ততঃ পােনেরো’শ বছর ধরে ফুান্স ও জৰ্ম্মাণীর ঐ মধ্যদেশ নিয়ে কত জাতি যে কত লড়াই করেছে তার অর লেখাজোখা নেই। ঐ প্রদেশ মানুষের এত রক্ত পান করেছে যে ওদেশে যে অঙ্গুর ফলে তার মদের রং আজও লাল ; আর সে মদ উদরস্থ করলেই মানুষের মাথায় খুন চড়ে যায়। ইউরােপের মধ্যযুগে এই মধ্যদেশে জাতিতে জাতিতে যে কি রক্তারক্তি করেছে তার বিপৰ্যয় কাহিনী মধযুগের যে কোন ইতিহাসে দেখতে পাবে। সে বিবরণ এত কুটিল আর এত জটিল যে তাকে সরল করবার ক্ষমতা আমার নেই। যুগ যুগ ধরে মানুষে মানুষে এই কোস্তাকুস্তির কারণ কি? ফান্স ও জৰ্ম্মাণীর বিচ্ছেদের একটি সরল রেখা বার করা ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ তারা কাগজে কলমে নয় ঢাল তলােয়ারে, যার সমাধান করবার এ যাবৎ বৃথা চেষ্টা করেছে, সে হচ্ছে একটি জ্যামিতির সমস্যা। থেকে স্পষ্টই প্রমাণ হয় যে সংসারের কোন সমস্যার সরল মীমাংসা করবার চেষ্টা থেকেই যত মারাত্মক জটিলতার উদ্ভব হয়। আর মানুষ যে সরল পথ খোঁজে তার জন্য দায়ী তিনি, যিনি মানুষকে সরল রেখার সন্ধান দিয়েছেন, অর্থাৎ ইউক্লিড। ভাল কথা ইউক্লিডের নাম করতেই মনে পড়ে গেল যে, ইউক্লিডের রচনার রূপ নেই একথা বলায়, আমার জনৈক অতি নিরীহ বন্ধু মহা রাগান্বিত হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন যে, যে-রূপের ভিতর কাম- গন্ধের নামগন্ধ পর্যন্ত নেই, সে রূপের সাক্ষাৎ একমাত্র জ্যামিতির ভিতরেই পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য আমার বন্ধুটি হচ্ছেন একজন পাকা জ্যামিতিক। “জ্যামিতিক” শব্দটি কলাপের ব্যাকরণে সুসিদ্ধ হয় কি না জানি নে, কিন্তু আলাপের ব্যাকরণে তা প্রসিদ্ধ হয়েছে।