পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা সমুদ্রের ডাক করে না। বন্ধনের প্রতি ব্যঞ্জনটি যে, একটি ক্ষুদ্র শিশুর আনন্দের সামগ্রী হবে। সমস্ত দিনটার দিকে চেয়ে দক্ষিণার আর তা মরুভূমি বলে মনে হয় না। সমস্ত দিনমান যে সে অনেকগুলো মেহের কাজের অধিকারিণী। শিশুকে স্নান করান –আহার করান-ঘুম পাড়ান তা যে দক্ষিণাকেই করতে হবে। ধন্য ভগবান! যিনি শিশুকে অসহায় করে এখানে এনেছেন। পিতামাতা একটি ক্ষুদ্র শিশুর কাছ থেকে যে কতখানি আনন্দ কুড়িয়ে নেয় --তা শিশুও বােঝে না আর পিতামাতাও জানে না। প্রসাদ ধীরে ধীরে ছ' বছরে পড়ল। একদিন রাতে ঘরের ভিতরে অসহ্য গরম বােধ হওয়ায় দক্ষিণ ঘরের দাওয়ায় একখানি মাদুর বিছিয়ে শয়ন করেছে। পাশে প্রসাদ। ভোরের মুখে দক্ষিণার ঘুম ভেঙে গেল। তখন একটি মাত্র কাক ডেকেছে-সমুদ্রের আর আকাশের যেখানে মিলন হয়েছে সেখানে কেবল একটি মাত্র রেখা শুভ্র হয়ে উঠেছে। ঐমন্ত তারও আগে জাল নিয়ে বেরিয়ে গেছে। দক্ষিণ তাড়াতাড়ি উঠতে যাচ্ছে, হঠাৎ তার চোখ পড়ে গেল প্রসাদের মুখের উপর। দক্ষিণার আর ওঠা হ’ল না। প্রসাদকে ত সে এমন কোন দিন দেখে নি! নিদ্রিত শিশুর হাত দুটো সন্তর্পনে তার বুকের ওপর ন্যস্ত। চোখ দুটো ফুলের পাপড়ির মতো নিমীলিত। আর ঠোট দুখানিতে একটী মৃদু অতি মৃদু হাসির রেখা। দক্ষিণ কি প্রসাদকে আর কোন দিন নিদ্রিত অবস্থায় দেখে নি ?—দেখেছে; কিন্তু সে-প্রসাদে আর এ-প্রসাদে যেন আকাশ পাতাল তফাৎ। আর কি কোন দিন সে প্রসাদকে হাসতে দেখে নি ?—দেখেছে; কিন্তু সে হাসিতে আর আজকার এই