পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবু পত্র আষাঢ়, ১৩২৫ ঝিনুক ইত্যাদি বেলা-ভূমে পড়ে থাকত দক্ষিণা তা কুড়িয়ে বেশ দু’ পয়সা উপায় করুত। কখনও কখনও বা দু' একটা বড় শঙ্খ বা কড়িও মিলে যেত। তা অবস্থাপন্ন গৃহস্থেরা বেশ দাম দিয়ে কিনে নিত। দক্ষিণা তাড়াতাড়ি প্রসাদকে কাপড় পরিয়ে দিল। তারপর কুটীরের দরজাটি টেনে দিয়ে মাতা এবং পুত্রে বের হয়ে পড়ল। ছােট বড় নানা রঙের নানা আকৃতির ঝিনুকে যখন দক্ষিণার ঝাকাটী পূর্ণ হয়ে উঠল তখন সমুদ্রগর্ভস্থিত সূর্যের ক্রদ্ধ রশ্মিগুলো পূৰ্ব্বদিগন্তে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত মেঘমালা তীরের মতো ভেদ করে, উর্কে নীলিমায় আপনাদের ছড়িয়ে দিয়েছে। ঝিনুক কুড়ােতে কুড়োতে তারা সমুদ্রের ধারে ধারে অনেকদূর গিয়ে পড়েছিল। ফিরবার পথও সেই সমুদ্রের ধারে ধারে। দক্ষিণা বাম কাকালে ঝিনুকপূর্ণ ঝাকাটী বহন করে’, দক্ষিণ হস্তে প্রসাদের ক্ষুদ্র হস্তটী ধারণ করে ছেলের সঙ্গে গল্প করূতে করুতে বাড়ী ফিরে চল। মা পুত্রে কথােপকথন করতে করতে চলছিল আর শিশুর চঞ্চল চোখ দুটী এদিক সেদিক ফিরছিল। একবার প্রসাদ সমুদ্রের দিকে চেয়ে দেখে, তারপর বলে উঠল—“দেখ দে মা কেমন একখানা জাহাজ কতদূর দিয়ে ছুটে চলেছে”—কিন্তু পরক্ষণেই তার উত্তোলিত অঙ্গুলি স্পাত দিয়ে কামড়ে ধরে একেবারে দাড়িয়ে গেল—শিশু যেন কি স্মরণ করবার চেষ্টা করতে লাগল। সহসা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠল—“মা জানিস ? দক্ষিণাও প্রসাদের সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে গিয়েছিল—বল—“কি বাবা?” “সেই যে সেদিনকার স্বপ্ন।”