পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা সমুদ্রের ডাক ১৮৩ তখনও তারা গর্জে গর্জে বেলাভূমে এসে প্রতিহত হয়ে ফিরছিল। আর তারই উপকূলে ছায়া-সুনিবিড় কুঞ্জতলে ক্ষুদ্র শিশু আপনার ক্ষুদ্র দুটী হাতে ক্ষুদ্র দুটী হাঁটু জড়িয়ে ধরে বসে বসে তাই দেখছিল ; শিশু পলকহীন—নির্বাক-নিস্তব্ধ । দক্ষিণা তাড়াতাড়ি অগ্রসর হয়ে প্রসাদকে কি ভৎসনা করতে যাচ্ছিল, কিন্তু প্রসাদ মানুষের পায়ের শব্দ শুনে চমকে চেয়ে দেখল, তারপর মাকে দেখে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরুল ও উত্তেজিত ভাবে বললে—“মা মা শুছি কি মা?” শিশুকণ্ঠের মা-ডাকে মাতার মনের ক্রোধ মুহূর্তে চোখের জলে পরিণত হয়ে গেল। দক্ষিণা প্রসাদকে বক্ষে তুলে নিয়ে মুখচুম্বন করে' জিজ্ঞেস করল-“কি বাবা?” প্রসাদ তেমনি উত্তেজিত কণ্ঠে বলল—“ঐ শােন শােন মা সমুদ্র কেবলি ডাকছে-‘প্রসাদ প্রসাদ।' শুনি না কি মা তুই ?” শিশুর কথা শুনে দক্ষিণার বুক দুরদুর করে কেঁপে উঠল। কোন অজ্ঞাত আশঙ্কার আশু সম্ভাবনায় তার চিত্ত মন প্রাণ ভিন্ন হয়ে উঠল। দক্ষিণা বলল-“ছিঃ বাবা পাগলামি করে না। সমুদ্র কি ডাকতে পারে। ও যে ঢেউয়ের শব্দ।” দক্ষিণা প্রসাদকে কোলে নিয়ে বাড়ী ফিরল। এর পর থেকে সুযােগ পেলেই প্রসাদ সেই ঝাউকুঞ্জতলে গিয়ে বসে একদৃষ্টে সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকত। এই ক্ষুদ্র শিশুটী সমস্ত খেলাধূলা ফেলে, একা একা সমুদ্রের দিকে চেয়ে কি ভাবে তা কে আনে। সিন্ধুর ছলছলয়িত কলরােল সে ক্ষুদ্র হৃদয়ের পরতে পরতে কোন ভাবের তরঙ্গ তুলে যায় তা কে বলতে পারে? কে জানে