পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা সাহিত্যের জাতরক্ষা ২২৫ হবে-নইলে আমাদের প্রাণ যে আমাদের মনকে ভুলিয়ে নিয়ে কোন পথে ছুটবে তার বিন্দুমাত্র ঠিক নেই। আর প্রাণ ছাড়া মন নেই- যদি ও বা থাকে, সে মন জীবন্ত সাহিত্য গড়তে পারে না। কারণ সাহিত্যিকের প্রাণ দিয়েই তার সাহিত্য প্রাণবান—মন জোগায় শুধু তার দেহ। সুতরাং আমাদের পুরাতন সাহিত্যকে সনাতন করে তুলতে চাইলে প্রথমত আমাদের জাতীয় প্রাণটাকে নষ্ট করে আমাদের সাহিত্যিক দের প্রাণ-মরা হতে হবে। সাহিত্যিকরা প্রাণ-মরা হলে তাদের চারপাশে “সনাতন জড়তার দেয়াল এক রাত্তিরে মাথা উঁচু করে দাড়াবে। আর সেই “সনাতন জড়তার দেয়ালের মধ্যে সাহিত্যই বল আর যাই বল, সব সনাতন হয়ে উঠবে আপনাআপনি—তার জন্যে আর কাউকেই কিছু করতে হবে না। কিন্তু যতক্ষণ মানুষের ভিতরে একটুও প্রাণ আছে, ততক্ষণ তা হবার উপায় নেই। প্রাণের একটা মহৎ দোষ এই যে, সে চলতে চায়; কারণ এই চলাই তার সত্য—আর সেই জন্যে এই চলার মধ্য দিয়ে সে চারিদিকে আনন্দের বান ডাকিয়ে যায়। আর মানুষের যা কিছু সত্য সৃষ্টি—তার সাহিত্যিক জীবনেই হােক বা তার কৰ্ম্ম-জীবনেই হােক, তার জন্ম এই আনন্দের মধ্যে। প্রাণের এমনি একটী মহৎ দোষ আছে বলেই আমাদের দেশের যােগী ঋষিরা-অবশ্য “অপ্রাচীন দার্শনিক যুগের”-প্রাণের উপরে এমন খড়গহস্ত। তারা প্রাণকে কায়দা করবার কত কত উপায় বের করেছেন; কারণ প্রাণ যতদিন আছে ততদিন নিৰ্বাণ নেই। কেননা প্রাণকে না মারতে পারলে জগৎটা নিরানন্দ হয়ে ওঠে না। আর জগৎটা নিরানন্দ হয়ে না উঠলে নির্বাণেরও কোন মুল্য থাকে না।