পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম বর্ষ, এথম সংখ্যা ot আপনার আশপাশের সহিত, বনিবনাও করিয়া চলিতে চায়, তখন তাহার চলার পথে বাধা আসে। গুরু আপনার প্রচুর প্রাণশক্তি লইয়া আসেন, এই বাধা দূর করিয়া দিবার জন্য। অতএব “অচলায়তনের” অর্থ সুস্পষ্ট। ইতিপুর্বের “রাজা” নাটকে ব্যক্তিবিশেষের কথা ছিল-“সুদর্শন” কি করিয়া অন্ধকার হইতে বাহির হইয়া আসিল। “অচলায়তন” সমাজের কথা, অনেকের কথা। এইখানেই সমস্যা। পরস্পরের সহিত পরস্পরের যােগ যেখানে বিচিত্র সেখানে প্রত্যেকের জন্য নূতন করিয়া ভাব সম্ভব নহে। মানুষের প্রয়ােজন বশ্বতঃই মানুষকে সামাজিক কল তৈয়ারি করিতে হইয়াছে। আমাদের সুবিধা হয় বলিয়া যদি প্রাণের সব কাজের ভার কলের উপর দিই, তাহা হইলে যাহার কাজ দাসত্ব করা, সে হয় প্রভু। ইতিহাসে দেখা যায় নােমকেরা যখন তাহাদের দাসদের উপর সব কাজের বরাত দিতে লাগিল, তখন তাহারা তাহাদের হইয়া যুদ্ধ করিতে লাগিল, তাহাদের উপর প্রভুত্ব করিতে লাগিল। বড় বড় সমাজের পতন এমন করিয়াই হয়। সমাজের যখন অবনতি হয় তখন সে কল অর্থাৎ orga nisation-এর উপর সব বরাত দেয়। তাহার তেজ যত মরে, বল যতই কমে, সে ততই কলের উপর বরাত দিয়া নিজের শক্তি বাঁচাইতে চায়। হয়ত ভারতবর্ষও এই কাজ করিয়াছে। যতই তাহার দুর্গতি ঘনাইয়া আসিয়াছে, ততই কলের উপর বরাত দিয়া প্রাণশক্তিকে সে নিশ্চেষ্ট করিয়া তুলিয়াছে।