পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Y R. সবুজ পত্ৰ কাৰ্ত্তিক ও অগ্রহায়ণ, ১৩২৫ বোধহয় তোমরা জান যে, আমি সাধু-বাঙলার পক্ষপাতী নই ; কেননা আমি শুদ্ধ-বাঙলার পক্ষপাতী। সাধু-বাঙলার সঙ্গে শুদ্ধবাঙলার প্রভেদটা যে কোথায়, সে বিচার আমি পরে করব। আপাতত একটি কথা মনে রাখলে আমার মত গ্ৰাহ্য করুবার পক্ষে না হো’ক, বোঝাবার পক্ষে তোমাদের কতকটা সাহায্য হবে। তোমরা সবাই জান যে, ভাষা মাত্রেরই একটি বিশেষ সুর, একটি বিশেষ ছন্দ, একটি বিশেষ মতি, একটি বিশেষ গতি, এক কথায় একটি বিশেষ প্ৰকৃতি আছে ; এবং আমার বিশ্বাস, সাহিত্যের ধৰ্ম্ম হচ্ছে, ভাসার সেই সুরকে ভরাট করা, সেই ছন্দকে জমাট করা, সেই মতিকে প্ৰসন্ন করা, সেই গতিকে প্রমুক্ত করা,-এক কথায় তার প্ৰকৃতিকে প্ৰকৃত করা । প্ৰকৃতিকে প্ৰকৃত করার প্রস্তাব, হঠাৎ শুনতে অর্থহীন বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয়। বহুকাল পূর্বে আরিষ্টল বলে গেছেন যে, বস্তুমাত্রেরই প্রকৃতির পরিচয় আমরা তখনই পাই-যখন সে বস্তুর অভিব্যক্তি পূর্ণ হয়। আর ভাষা একমাত্ৰ সাহিত্যেই তার পুর্ণ অভিব্যক্তি লাভ করে অর্থাৎ প্ৰকৃত হয়ে ওঠে। ( ७ ) এ যুগের বাঙলা-সাহিত্য আজ পৰ্য্যন্ত যে-ভাষার দখলে রয়েছে, সে ভাষা সংস্কৃত শব্দের গুরুভারে ভারাক্রান্ত, যুগপৎ ইংরাজি ও সংস্কৃত অন্বয়ের বন্ধনে তা আবদ্ধ। সুতরাং যাঁরা বাঙলা ভাষার মুল উপাদান ও মুল প্ৰকৃতির পরিচয় লাভ করতে চান, তঁদের পক্ষে সৰ্ব্বাগ্ৰে কৰ্ত্তব্য হচ্ছে, প্ৰাচীন বাঙলা সাহিত্যের চর্চা করা। "