পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ পত্র বৈশাখ, ১৩২৫ অহিংসা পরম ধর্ম। এই যে মানব সভ্যতার শেষ কথা । আমি সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস করি। এই বিরাট হত্যাকাণ্ডেও আমার এ বিশ্বাস টলাতে পারে নি, কেননা এ ব্যাপার এই সত্যেরই প্রমাণ দিচ্ছে যে, মানুষ আজও তার পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভ করে নি। নর সংস্কৃত-বানর কিম্বা বানর নরের অপভ্রংশ এ নিয়ে জীবতত্ত্ববিদদের মধ্যে আজও তর্ক চলছে। তাত্ত্বিক ও তার্কিকদের কথা ছেড়ে দিলেও আমরা সাদা চোখে স্পষ্ট দেখতে পাই, মানুষেও মর্কটে আকৃতিগত ও প্রকৃতিগত যথেষ্ট মিল আছে। মর্কটের ভিতর মনুষ্যত্ব আছে কি না জানি নে— কিন্তু মানুষের ভিতর যে মর্কট আছে তা অস্বীকার করবার জো নেই। মানুষে মানুষে যা প্রভেদ, সে হচ্ছে প্রধানত এই মনুষ্যত্ব ও মর্কটত্বের অনুপাত নিয়ে। “অহিংসা পরম ধৰ্ম্ম” এ হচ্ছে পূর্ণ মনুষ্যত্বের বাণী, অতএব আমাদের অন্তর্নিহিত মর্কট সে বাণীকে অবজ্ঞা করে উপহাস করে বলে, ও হচ্ছে দুর্বলের ধৰ্ম্ম। এ অভিযােগ যে মিথ্যা তার প্রমাণ, যে যুগে ভারতবর্ষ এই ধৰ্ম্ম অঙ্গীকার করেছিল সেই হচ্ছে ভারতবর্ষের অপূর্ব শক্তির যুগ। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, শিল্পে কলায়, সাম্রাজ্যে ও বাণিজ্যে ভারতবর্ষের বৌদ্ধযুগের কৃতিত্বের আর তুলনা নেই। তার কারণ, শুধু রণক্ষেত্রে নয়, জীবনের সকলক্ষেত্রে যারা বীর তারা ছাড়া আর কেউ ও ধর্ম যথার্থ গ্রহণ ও পালন করতে পারে না। কেননা ও ধৰ্ম্ম অনুসরণ করবার ভিতর যে বীরত্ব, তা ক্ষণিকের নয় চিরজীবনের। সে বীর্যের অন্তরে অগাধ করুণা আর অটল ধৈৰ্য্য সমান থাকা চাই। বৌদ্ধধর্ম যে বীরের ধর্ম, সে জ্ঞান আদি বৌদ্ধদের পূর্ণমাত্রায় ছিল সেইজন্যে তাদের কথা-সাহিত্যের নাম “অবদান” অর্থাৎ বীর কাহিনী